Ticker

5/recent/ticker-posts

অগ্নিকুণ্ড অধিপতিদের ঘটনা

শপথ গ্রহ-নক্ষত্র শোভিত আকাশের, এবং সেই দিনের যার ওয়াদা করা হয়েছে, আর যে দেখে তার এবং সেই জিনিসের যা দেখা যায়। অভিশপ্ত হয়েছে গর্ত ওয়ালারা, দাউ দাউ করে জ্বলা জ্বালানীর আগুন ছিল; যখন তারা সেই গর্তের কিনারায় বসেছিল। আর তারা বিশ্বাসীদের সাথে যা করছিল, তা দেখছিল। তারা তাদেরকে শাস্তি দিয়েছিল শুধু এ কারণে যে, তারা মহাপরাক্রমশীল প্রশংসিত আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর রাজত্বের অধিকারী, আর সে আল্লাহ‌ সবকিছু দেখছেন। যারা মুমিন পুরুষ ও নারীদের নিপীড়ন করেছে, অতঃপর তাওবাহ করেনি, তাদের জন্যে আছে জাহান্নামের শাস্তি, আর আছে দহন যন্ত্রণা। -[ক্বুরআন ৮৫ : ১-১০]

আসহাবুল উখদুদ বা গর্তওয়ালাদের কাহিনী সম্পর্কে অনেক বর্ণনা বিদ্যমান। এর মধ্যে আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে বর্ণিত ঘটনাটি এখানে তুলে ধরা হল-

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের সত্তর বছর পূর্বে ইয়েমেনের নাজরানে ইউসুফ জুনয়াস নামক এক জালিম বাদশাহ ছিল। সে এতটাই জালিম ছিল যে, নিজের রাজত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সাধারণ মানুষের উপর জাদু করে তাদের কে বশ করে রাখত যেন কেউ তার বিরুদ্ধে বিদ্রহ বা প্রতিবাদ করতে না পারে। এর জন্য তার এক বিখ্যাত জাদুকর ছিল যে মানুষের উপর জাদু টুনা চালাত এবং গ্রহ নক্ষত্র দেখে রাজা কে ভবিষ্যতের খবরাদি দিত। কিন্তু সেই জাদুকর বৃদ্ধ হয়ে পড়েছিল তাই রাজার কাছে সে আবদার করল তাকে একটা চালাক চতুর বালক দেওয়া হোক যাকে সে মৃত্যুর পূর্বে তার সকল জ্ঞান শিখিয়ে যেতে পারে।

তখন রাজার আদেশে অনেক যাচাই বাছাই এর পর এক বালক কে নির্বাচন করা হল। তার নাম ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে তামের। রাজা তাকে জাদুকরের কাছে বিদ্যা অর্জন করতে আদেশ দিল। তো যথারীতি সে জাদুকরের কাছে আসা যাওয়া করতে লাগল। কিন্তু আসা যাওয়ার পথে জনৈক খৃষ্টান পাদ্রী বসবাস করত। সেই যুগে খৃষ্ট ধর্মই ছিল সত্য ধর্ম। তো সে পাদ্রির কথা বার্তাই কিছু টা প্রভাবিত হয়ে পড়ে। এর পর আশা যাওয়ার পথে সে পাদ্রীর কাছ থেকেও জ্ঞান অর্জন করতে থাকে। কিন্তু বাড়িতে ফিরে আসতে এবং জাদুকরের কাছে যেতে তার তার দেরি হয়ে যেত পাদ্রীর মজলিসে বসার কারণে। তাই উভয় পক্ষের লোকেরা যাতে সন্দেহ না করে সেমতে পাদ্রী তাকে বলে দিল যদি জাদুকর তাকে জিজ্ঞাস করে দেরি হল কেন তবে বলবে বাড়ি থেকে দেরিতে ছেড়েছে আর যদি বাড়ির লোকেরা শোনে দেরি হল কেন তবে বলবে পাদ্রী দেরিতে ছেড়েছে এবং কোন অবস্থাতেই যেন পাদ্রীর কথা না বলে।

একবার আসা যাওয়ার পথে যুবকের দৃষ্টিতে এক হিংস্র জন্তু পড়ে যে মানুষ কে যাতায়াতে সমস্যার সৃষ্টি করছিল। তো সে একটি পাথর নিয়ে মনে মনে বলল যদি পাদ্রী সত্য হয় তবে যেন জন্তুটি মারা যায় আর জাদুকর সত্য হয় তবে যেন জন্তুটি না মরে। এর পর পাথরটি নিক্ষেপ করলে জন্তুর মৃত্যু ঘটে। এই খবরের মাধ্যমে যুবকের ক্ষমতার কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে রাজদরবারের জনৈক অন্ধ ব্যাক্তি এসে তার অন্ধত্ব মোচনের জন্য আবেদন করে। বালক বলে সকল ক্ষমতার উৎস আল্লাহ্‌ তায়ালা তুমি সত্য ধর্ম গ্রহণ করলে আমি চেষ্টা করে দেখব। অন্ধ এই শর্ত মেনে নিলে যুবক তার জন্য দুয়া করতেই সে দৃষ্টি শক্তি ফিরে পায় এবং সত্য ধর্ম গ্রহণ করে।

এই সংবাদ বাদশাহর কানে যাওয়ার পর উভয় কে গ্রেফতার করা হল অন্ধ ব্যাক্তিকে ধর্ম ত্যাগ করাতে না পারায় নির্মম ভাবে হত্যা করা হল। বালক কে অনেক নির্যাতন করার পর সে পাদ্রীর নাম বলে দেয়। পাদ্রিকে এনে করাত দ্বারা মাথা থেকে চিড়ে ফেলে হত্যা করা হল। অতঃপর বালকের অতিকষ্টকর মৃত্যু আচ্ছাদনের জন্য রাজা তাকে পাহাড়ের উপর থেকে ফেলে হত্যা করার নির্দেশ দিল কিন্তু যারা বালকের সাথে পাহাড়ে গেল তারাই বরং ভূকম্পনের ফলে পাহাড় থেকে পড়ে মারা গেল। যুবক তখন নিরাপদে ফিরে এল। তার পর রাজা তাকে সমুদ্রে নিয়ে নিক্ষেপ করার আদেশ দিল। কিন্তু যারা তাকে নিয়ে গেল তারাই সমুদ্রে নিমজ্জিত হল এবং বালক নিরাপদে ফিরে এল।

রাজা কোন ভাবেই তাকে হত্যা করতে সমর্থ হল না। অবশেষে বালক রাজা কে বলল তুমি শুধু আমার কথা মত কাজ করলেই আমাকে মারতে পারবে। তখন রাজা বলল ঠিক আছে। বালক বলল এই শহরের সবচেয়ে বড় মাঠে সকল মানুষ কে জড়ো কর অতঃপর তাদের সম্মুখে আমার তূণীর থেকে একটি তীর নিয়ে '' এই যুবকের পালনকর্তাই নামে '' বলে নিক্ষেপ করলেই আমি মারা যাব। সেই অনুযায়ী কাজ করা হলে বালক টি মারা গেল। এই বিস্ময়কর ঘটনা দেখে সকলে কতিপয় কিছু দরবারী ছাড়া বলে উঠল আমরা এই বালকের পালনকর্তার উপর ঈমান আনলাম।

কিন্তু রাজা এতে পেরেশান হয়ে গেল এবং তার সভাসদদের পরামর্শে বিরাট বিরাট গর্ত খনন করে তাতে অগ্নি পূর্ণ করে ঘোষণা যেই এই নতুন ধর্ম ত্যাগ না করবে তাকেই অগ্নিতে নিক্ষেপ করা হবে। কিন্তু কেউই তাতে রাজী হল না বর্ং অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হওয়া কেই বেছে নিল। কিন্তু মাত্র এক জন মহিলা তার কোলের বাচ্চার কারণে অগ্নিতে ঝাপ দিতে ইতস্তিত বোধ করছিল তখন আল্লাহ্‌ তায়ালা বাচ্চার জবান খুলে দেন এবং বাচ্চা বলে উঠল 'আম্মা আপনি সত্যের উপর আছেন' তখন মহিলা নিশ্চিত হয়ে আগুনে ঝাপ দিল।


তথ্যসূত্র: আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ২য় খণ্ড


প্রাসঙ্গিক বিষয়

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ