Ticker

5/recent/ticker-posts

ছামূদ জাতির ধ্বংসের বিবরণ

আর সামুদ জাতির কাছে তাদের ভাই সালিহকে পাঠিয়েছিলাম; সে বলল, হে আমার জাতি! আল্লাহর বন্দেগী কর, তিনি ছাড়া তোমাদের কোন উপাস্য নাই। তিনিই যমীন হতে তোমাদেরকে পয়দা করেছেন, আর তন্মধ্যেই তোমাদেরকে বসতি দান করেছেন। অতএব; তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর অতঃপর তাঁরই দিকে ফিরে চল, আমার প্রতিপালক তো অতি নিকটেই আছেন, আর তিনি দু'আ কবুল করে থাকেন। তারা বলল, হে সালিহ! ইতিপূর্বে তোমার কাছে আমাদের বড় আশা ছিল। আমাদের বাপ-দাদা যা পূজা করত তুমি কি আমাদেরকে তার পূজা করতে নিষেধ কর? তুমি আমাদেরকে যে দিকে ডাকছ সে সম্পর্কে আমরা বিভ্রান্তিকর সংশয়ে পড়ে আছি। সালিহ বলল, হে আমার জাতি! তোমরা কি চিন্তা করে দেখেছ, আমি যদি আমার পালনকর্তার সুস্পষ্ট প্রমাণের উপর থাকি আর তিনি যদি আমাকে নিজের তরফ হতে রহমত দান করে থাকেন, এমতাবস্থায় আমি যদি তাঁর অবাধ্য হই তবে তার (আযাব) থেকে কে আমায় রক্ষা করবে? তোমরা তো কেবল আমার ক্ষতিই বাড়িয়ে দিতে চাও। আর হে আমার জাতি! আল্লাহর এ উষ্ট্রীটি তোমাদের জন্য নিদর্শন, অতএব তাকে আল্লাহর যমীনে বিচরণ করে খেতে দাও, একে কোনপ্রকার কষ্ট দিও না, নচেৎ অতি সত্বর তোমাদেরকে আযাব পাকড়াও করবে। তবু তারা উষ্ট্রীটির পা কেটে দিল। তখন সালিহ বলল, তোমরা নিজেদের গৃহে তিনটি দিন জীবন উপভোগ করে নাও। ইহা এমন ওয়াদা যা মিথ্যা হতে পারে না। অতঃপর আমার আযাব যখন উপস্থিত হল, তখন আমি সালিহকে ও তার সঙ্গী ঈমানদারগণকে নিজ রহমতে উদ্ধার করি, এবং সেদিনকার অপমান হতে রক্ষা করি। নিশ্চয় তোমার পালনকর্তা তিনি সর্বশক্তিমান, পরাক্রমশালী। আর প্রচন্ড শব্দ পাপিষ্ঠদের পাকড়াও করল, (ফলে ভোর হতে না হতেই) তারা নিজ নিজ গৃহসমূহে উপুর হয়ে পড়ে রইল।যেন তারা কোনদিনই সেখানে ছিল না। জেনে রেখ, সামুদ জাতি তাদের পালনকর্তারকে অস্বীকার করেছিল। জেনে রেখ, সামুদকে (রহমাত হতে) দূরে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। -[ক্বুরআন ১১ : ৬১-৬৮]

হযরত সালিহ (আ:) কোমল ভাষায় ও সৌজন্যমূলক আচরণের মাধ্যমে এভাবেই তাদেরকে কল্যাণের পথে আহ্বান করেছিলেন। কিন্তু তার সম্প্রদায়ের অল্প সংখ্যক লোকই তাঁর ডাকে সাড়া দেয়।

মুফাসসিরগণ উল্লেখ করেন, ছামূদ সম্প্রদায়ের লোকেরা একবার এক স্থানে সমবেত হয়। ঐ সমাবেশে নবী সালিহ (আ) আগমন করেন এবং তাদেরকে আল্লাহর দিকে আহ্বান জানান, উপদেশ দান করেন, ভীতি প্রদর্শন করেন, নসীহাত করেন এবং তাদেরকে সৎ কাজের নির্দেশ দেন। উপস্থিত লোকজন তাঁকে বলল, ঐ যে একটা পাথর দেখা যায়, ওর মধ্য থেকে যদি অমুক অমুক গুণসম্পন্ন একটি দীর্ঘকায় দশ মাসের গর্ভবতী উটনী বের করে দেখাতে পার, তবে দেখাও। সালিহ (আ) বললেন, তোমাদের বর্ণিত গুণসম্পন্ন উটনী যদি আমি বের করে দেই তাহলে কি তোমরা আমার আনীত দ্বীন ও আমার নবুওয়াতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে? তারা সবাই বলল, হ্যাঁ, বিশ্বাস করব। তখন তিনি এ কথার উপর তাদের থেকে অঙ্গীকার ও প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেন। এরপর সালিহ (আ) সালাত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে যান এবং আল্লাহর নিকট তাদের আবদার পূরণ করার প্রার্থনা করেন। আল্লাহ্ তার প্রার্থনা কবুল করেন এবং ঐ পাথরকে কেটে গিয়ে অনুরূপ গুণসম্পন্ন একটি উটনী বের করে দেয়ার নির্দেশ দেন। যখন তারা স্বচক্ষে এরূপ উটনী দেখতে পেল, তখন অনেকেই ঈমান আনল, কিন্তু অধিকাংশ লোকই তাদের কুফরী, গুমরাহী ও বৈরিতার উপর অটল হয়ে থাকল।

অতঃপর হযরত সালিহ (আ) তাদেরকে বললেন, এটি আল্লাহর উটনী, তোমাদের জন্য নিদর্শন। একে আল্লাহর যমীনে চরে খেয়ে বেড়াতে দাও এবং এর অনিষ্ট সাধন করোনা। অন্যথায় এক নিকটবর্তী আযাব তোমাদেরকে পাকড়াও করবে। তারপর অবস্থা এই দাঁড়াল যে, এ উটনীটি তাদের মধ্যে স্বাধীনভাবে যেখানে ইচ্ছা চরে বেড়াত, একদিন পর পর পানির ঘাটে অবতরণ করত। যেদিন সে পানি পান করত সেদিন কূপের সমস্ত পানি নিঃশেষ করে ফেলত। তাই সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের পালার দিনে পরের দিনের জন্যে প্রয়োজনীয় পানি উত্তোলন করে রাখত।

দীর্ঘদিন যাবত এ অবস্থা চলতে থাকায় সম্প্রদায়ের লোকের অধৈর্য হয়ে পড়ে। এর থেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্য তারা একদা সমবেত হয় ও পরামর্শ করে। তারা সম্মিলিতভাবে এই সিদ্ধান্ত করে যে, উটনীটিকে হত্যা করতে হবে। এর ফলে তারা উটনীটির কবল থেকে নিষ্কৃতি পাবে এবং সমস্ত পানির উপর তাদের পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। শয়তান তাদেরকে এ কাজের যুক্তি ও সুফল প্রদর্শন করল।

অতঃপর তারা উষ্ট্রীটিকে হত্যা করল এবং স্বীয় প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল, আর বলল, 'হে সালিহ! যদি তুমি রসূল হয়ে থাক তাহলে নিয়ে এস যদ্দ্বারা আমাদেরকে ভয় দেখাচ্ছ'। -[ক্বুরআন ৭ : ৭৭]

এই উক্তির মধ্যে তারা কয়েকটি জঘন্য কুফরী কথা বলেছে, যথা- (১) আল্লাহ্ যে উটনী তাদের জন্যে নিদর্শন রূপে পাঠিয়ে তাকে কোন প্রকার কষ্ট দিতে নিষেধ করেছে, তারা তাকে হত্যা করে আল্লাহ্ ও রাসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে। (২) আযাব আনয়নের জন্যে তারা বেশি রকম তাড়াহুড়া করে। (৩) তারা তাদের নিকট প্রেরিত রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে অথচ তাঁর নবুওয়াতের দাবির সত্যতার পক্ষে চুড়ান্ত প্রমাণ উপস্থিত করেছিলেন।

শেষে তারা তাদের সঙ্গীকে ডাকল, আর সে তাকে ধরল এবং বধ করল। অতঃপর কতইনা কঠোর ছিল আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী। -[ক্বুরআন ৫৪ : ২৯-৩০] 
তবু তারা উষ্ট্রীটির পা কেটে দিল। তখন সালিহ বলল, তোমরা নিজেদের গৃহে তিনটি দিন জীবন উপভোগ করে নাও। ইহা এমন ওয়াদা যা মিথ্যা হতে পারে না। -[ক্বুরআন ১১ : ৬৫] 
তারা এক চক্রান্ত করেছিল এবং আমিও এক কৌশল অবলম্বন করেছিলাম, কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি। অতঃপর, দেখ তাদের চক্রান্তের পরিণতি কেমন হয়েছিল? আমি অবশ্যই তাদেরকে এবং তাদের সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দিয়েছিলাম। এই তো তাদের বাড়ীঘর জনশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে, কারণ তারা বাড়াবাড়ি করেছিল। নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন আছে। আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছিল এবং আল্লাহকে ভয় করত, তাদেরকে আমি উদ্ধার করেছিলাম। -[ক্বুরআন ২৭ : ৫০-৫৩]

যে কয় ব্যক্তি সালিহ (আ) কে হত্যা করতে সংকল্পবদ্ধ হয়, আল্লাহ্ প্রথম তাদের উপর পাথর নিক্ষেপ করে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেন। পরে গোটা সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেন। যে তিনদিন তাদেরকে অবকাশ দেয়া হয়েছিল তার প্রথমদিন ছিল বৃহস্পতিবার। এই দিন আসার সাথে সাথে সম্প্রদায়ের সকলের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়। দ্বিতীয় দিন শুক্রবারে সকলের চেহারা লাল রঙ ধারণ করে। তৃতীয় দিন শনিবারে সকলের চেহারা কাল রঙ ধারণ করে। সন্ধ্যাবেলা তারা বলাবলি করে যে, জেনে নাও, নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেছে। রবিবার সকালে তারা খোশবু লাগিয়ে প্রস্তুত হয়ে অপেক্ষায় থাকল- কি শাস্তি ও আযাব-গযব নাযিল হয় তা দেখার জন্যে। তাদের কোনই ধারণা ছিল না যে, তাদের কি করা হবে এবং কোন দিক থেকে আযাব আসবে। কিছু সময় পর সূর্য যখন উপরে এসে উজ্জ্বল হয়ে উঠল, তখন আসমানের দিক থেকে বিকট আওয়াজ এলো এবং নিচের দিক থেকে প্রবল ভূকম্পন শুরু হল। সাথে সাথে তাদের প্রাণবায়ু উড়ে গেল, সকল নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেল এবং যা সত্য তাই বাস্তবে ঘটে গেল। ফলে সবাই লাশ হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে রইল।


তথ্যসূত্র: আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১ম খণ্ড



প্রাসঙ্গিক বিষয়

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. খুব সুন্দর লেখা। তবে আয়াত গুলোর আরবি থাকলে আরও ভালো হতো।

    উত্তরমুছুন