Ticker

5/recent/ticker-posts

যুলকারনাইন ও ইয়াজুজ-মাজুজ

আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,
তারা আপনাকে যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, আমি তোমাদের কাছে তাঁর বিষয়ে কিছু বর্ণনা করব। আমি তাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম এবং তাকে সব রকমের সাজ-সরঞ্জাম ও উপকরণ দিয়েছিলাম। অতঃপর তিনি এক রাস্তা অবলম্বন করলেন। অবশেষে তিনি যখন সুর্যের অস্তাচলে পৌছলেন; তখন তিনি সুর্যকে এক অস্বচ্ছ জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি বললাম, হে যুলকারনাইন! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদেরকে সদাচার করতে পারেন। তিনি বললেন, যে কেউ সীমালঙ্ঘনকারী হবে আমি তাকে শাস্তি দেব। অতঃপর তিনি তাঁর পালনকর্তার কাছে ফিরে যাবেন। তিনি তাকে কঠোর শাস্তি দেবেন। আর যে বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে তার জন্য রয়েছে উত্তম পুরস্কার এবং আমি তাকে সহজ কাজের নির্দেশ দেব। অতঃপর তিনি আরক পথ অবলম্বন করলেন। (১৮: ৮৩-৮৯)


অবশেষে তিনি যখন সূর্যের উদয়াচলে পৌছলেন, তখন তিনি তাকে এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উদয় হতে দেখলেন, যাদের জন্যে সূর্যতাপ থেকে আত্মরক্ষার কোন আড়াল আমি সৃষ্টি করিনি। প্রকৃত ঘটনা এমনিই। তার বৃত্তান্ত আমি সম্যক অবগত আছি। আবার তিনি আরেক পথ ধরলেন। (১৮: ৯০-৯২)


আবার যখন তিনি দুই পর্বত প্রচীরের মধ্যস্থলে পৌছলেন, তখন তিনি সেখানে এক জাতিকে পেলেন, যারা তাঁর কথা কমই বুঝতে পারে। তারা বলল, হে যুলকারনাইন! ইয়াজুজ-মাজুজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে। আপনি বললে আমরা আপনার জন্যে কিছু কর ধার্য করব এই শর্তে যে, আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন। তিনি বললেন, আমার পালনকর্তা আমাকে যা দিয়েছেন, তাই যথেষ্ট। অতএব, তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য কর। আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যে একটি সুদৃঢ় প্রাচীর নির্মাণ করে দেব। তোমরা আমাকে লোহার পাত এনে দাও। অবশেষে যখন পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান পূর্ণ হয়ে গেল, তখন তিনি বললেন, তোমরা হাঁপরে দম দিতে থাক। অবশেষে যখন তা আগুনে পরিণত হল, তখন তিনি বললেন, তোমরা গলিত তামা নিয়ে এস, আমি তা এর উপরে ঢেলে দেই। (১৮: ৯৩-৯৬)


অতঃপর তারা (ইয়াজুজ ও মাজুজ) তার উপরে আরোহণ করতে পারল না এবং তা ভেদ করতে ও সক্ষম হল না। সে (যুলকারনাইন) বললেন, এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ। যখন আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুত সময় আসবে, তখন তিনি একে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন, আর আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুতি সত্য। (১৮: ৯৭-৯৮)


যুল-কারনায়ন নামকরণের ব্যাপারে ঐতিহাসিকগণ বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করেছেন। কারও মতে, তাঁর মাথায় দুইটি শিং এর মত ছিল এ কারণে তাঁকে যুল-কারনায়ন (দুই শিংওয়ালা) বলা হয়েছে। কেউ বলেন, যেহেতু তিনি সূর্যের দুই প্রাণ্ত পূর্ব ও পশ্চিম এর মধ্যবর্তী সমস্ত জায়গার একচ্ছত্র বাদশাহ ছিলেন, তাইতাকে এ নামে ভূষিত করা হয়েে।


যুবায়র ইবনে বাক্কার... সুফিয়ান ছাওরী (র) থেকে বর্ণনা করেন, সমগ্র পৃথিবীতে রাজত্ব করেছেন এমন বাদশাহ ছিলেন চারজন। এদের দুইজন মুমিন- (১) নবী সুলায়মান, (২) যুল-কারনায়ন; আর দুইজন কাফির- (১) নমরুদ, (২) বুখত নসর।


রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“মানুষের মধ্যে ১০০০ জনে ৯৯৯ জনই জাহান্নামে যাবে, এই জাহান্নামীদের মধ্যে অধিকাংশ হবে এই ইয়াজুজ ও মাজুজেরা।”


ইয়াজুজ মাজুজের ফেতনা কেউ প্রতিহত করতে পারবেনা (বা তাদের হাত থেকে বাঁচতে পারবেনা)। ঈসা আ’লাইহিস সালাম তখন মুসলিমদেরকে নিয়ে তুর পাহড়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হবেন। ঈসা আ’লাইহিস সালাম তাদের বিরুদ্ধে বদ দুয়া করলে তাদের মাথায় পোকা হয়ে তারা সবাই মৃত্যুবরণ করবে। ঈসা আ’লাইহিস সালাম তুর পাহাড় থেকে মাটিতে অবতরণ করে দেখবেন, সারা জমিন জুড়ে ইয়াজুজ-মাজুজের লাশ ছড়ানো। তাদের মৃতদেহের দুর্গন্ধে ভরে যাবে। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআ’লা এক জাতীয় পাখি প্রেরণ করবেন; যারা তাদের লাশগুলো তুলে সমুদ্রে নিক্ষেপ করবে। তারপর আল্লাহ প্রবল বৃষ্টি বর্ষাবেন, যাতে সারা পৃথিবী পরিষ্কার হয়ে যাবে।


তথ্যসূত্র:

  • সূরা আল কাহফ
  • আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ