Ticker

5/recent/ticker-posts

তাযকিরাতুল মাওত



যেহেতু মানুষের মৃত্যুর মাধ্যমে তার আখেরাতের জীবন শুরু হয়, দুনিয়াতে কৃত কর্মের হিসাব গ্রহণ শুরু হয় সেইজন্য ক্বুরআন ও হাদীসে মানুষকে বারবার মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে করে সে দুনিয়ার ধোঁকায় পড়ে আখেরাতের অনন্ত জীবনের কথা ভুলে না যায়।


(১) আল্লাহ তাআ’লার বাণী,

كُلُّ نَفۡسٖ ذَآئِقَةُ ٱلۡمَوۡتِۗ

“প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।” (আল-আম্বিয়া: ৩৫)


(২) মানুষের জীবনে বড় রকমের বিপদ-আপদগুলোর মাঝে মৃত্যু অন্যতম মহাবিপদ। আল্লাহ তাআ’লা তাকে মুসিবত (বিপদ) বলেই নামকরণ করেছেন। তিনি বলেন,

فَأَصَٰبَتۡكُم مُّصِيبَةُ ٱلۡمَوۡتِۚ

“....এবং তোমাদেরকে মৃত্যুর বিপদ পেয়ে বসে।” (সুরা আল-মাইয়ি’দাহ: ১০৬)


হাদীসে মানুষকে মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ করতে এবং মৃত্যুকে স্মরণ করার উপকারীতা বর্ণনা করা হয়েছে।


(৩) আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা স্বাদ বিনষ্টকারী মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ কর।” (ইবনু হিব্বান: ৪/২৮১, হাসান, সহীহ আল-জামি: ২৬৪৮)


(৪) আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মা (আমিনার) কবর যিয়ারত করার সময় ক্রন্দন করলেন, তাঁর আশ পাশের সবাই ক্রন্দন করলেন। এসময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “আমি আমার মায়ের ক্ষমা চাওয়ার জন্য (আল্লাহর কাছে) অনুমতি চাইলাম, কিন্তু আমাকে সেইজন্য অনুমতি প্রদান করা হল না। অতঃপর তার কবর যিয়ারতের অনুমতি চাইলে তার অনুমতি দেওয়া হয়। তাই তোমরা কবর যিয়ারত কর, কেননা তা তোমাদেরকে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।” (নাসায়ী: ২০৩৮, ইবন মাজাহ: ১৫৭২, হাদীসটি সহীহ, ইরউয়াউল গালীলঃ ৭৭২)


(৫) শায়খ আহমাদ আর-রুমী আল-হানাফী রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “এই হাদীসের অর্থ হচ্ছেঃ মৃত্যু (দুনিয়ার জীবনের) প্রতিটা স্বাদ ও রুচিকে নষ্ট করে দেয়; সুতরাং তোমরা তার কথা বেশি বেশি স্মরণ কর; যাতে তোমরা তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পার।” (নাসায়ী)


(৬) আবু আলী আদ-দাক্বাক রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি বেশি বেশি মৃত্যুর কথা স্মরণ করবে, সে ব্যক্তি তিনটি জিনিস দ্বারা সম্মানিত হবেঃ দ্রুত তোওবা করা, অন্তরের তৃপ্তি অনুভব করা এবং ইবাদতে প্রফুল্লতা অর্জিত হওয়া। আর যে ব্যক্তি মৃত্যুর কথা ভুলে যাবে, তাকে তিনটি জিনিস দ্বারা শাস্তি দেওয়া হবেঃ তোওবা করার ক্ষেত্রে গড়িমসি করা, দুনিয়ায় প্রতি লোভ এবং ইবাদতের ক্ষেত্রে অবহেলা।”


(৭) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, “মুমিনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান কে?” উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তাদের মধ্যে যারা মৃত্যুকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য উত্তমরূপে প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তারাই হচ্ছে সবচাইতে বুদ্ধিমান (মুমিন)।” [ইবনে মাজাহ: ৪২৫৯, শায়খ আলবানী হাসান বলেছেন]


উৎস এবং কৃতজ্ঞতা:

শায়খ আহমাদ আর-রুমী আল-হানাফী রহি’মাহুল্লাহ (মৃত্যু ১০৪৩ হিজরী), তাঁর রচিত “মাজালিসুল আবরার ওয়া মাসালিকুল আখইয়ার” গ্রন্থ থেকে অনুদিত। বইটির নামের অর্থ হচ্ছে, নেককার লোকদের আসর ও ভালো মানুষগণের কর্মপদ্ধতি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ