Ticker

5/recent/ticker-posts

ক্বুরআনকে অন্তরে ধারণ করার গুরুত্ব



শায়খ মুহাম্মদ আলী আদাম আল-ইথিওবি রহি’মাহুল্লাহ বলেন,

“তোমার দ্বীনের জ্ঞান অর্জন শুরু করো প্রাথমিক (অত্যাবশ্যকীয়) জ্ঞান অর্জনের দ্বারা, এরপর ইসলামী সাধারণ জ্ঞানের বিষয়সমূহ আয়ত্ত্ব করার জন্য সচেষ্ট হও।

প্রথমতঃ সঠিক তাজওয়ীদ সহকারে আল্লাহর কিতাব হিফয করো এবং তোমার আত্মাকে বারবার ক্বুরআন পড়ার উপরে ধৈর্যশীল রাখো। সালাফদের কাছে এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো এবং তাদের তরীক্বা ছিলো, কোন ব্যক্তি ক্বুরআন হিফয না করে দ্বীন শিখতে আসলে তারা তাকে কিছু শিখাতেন না। এইভাবে কোন তালিবে ইলম কোন কিছু না শিখেই লজ্জিত অবস্থায় নিজ দেশে ফিরে যেত। 


ক্বুরআন হিফয করার মাঝে অনেক উপকার রয়েছে, যা ছাত্রদেরকে তাদের ভবিষ্যত জীবনে অনেক সাহায্য করে। সত্যি কথা বলতে, ক্বুরআন হিফয করার উপকারীতা লিখে শেষ করা সম্ভব না। একারণে এই মুহূর্তে আমার মনে আসছে এমন মাত্র সাতটি দিক উল্লেখ করছি, যা ইলম অর্জনের সাথে সরাসরি জড়িত। 

(১) ক্বুরআন হিফয করা আল্লাহ এবং তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি একনিষ্ঠ ভালোবাসা সৃষ্টি করে। এই অনুপ্রেরণা তোমাকে দিন-রাত, এমনকি ক্লান্তির সময়েও নেক আমলের দিকে পরিচালিত করবে। 

(২) ক্বুরআন হিফয করা অন্তরকে নরম করে। (ক্বুরআনে বর্ণিত) জান্নাত, জাহান্নাম এবং পরকালের কথা শুনতে শুনতে কিভাবে একজন মানুষের অন্তরকে বিগলিত না হয়ে থাকতে পারে? 

(৩) ক্বুরআন হিফয করা সবর এবং ইস্তিক্বামা শিক্ষা দেয়। দিন-রাত বারবার ক্বুরআন হিফয করার মেহনত একজন ছাত্রকে ভবিষ্যত জীবনে কঠোর পরিশ্রম করার জন্য প্রস্তুত করে। যদি তুমি রাব্বুল আ'লামিনের সুমহান ক্বালাম তিলাওয়াত করা, মুখস্ত করা, বারবার রিভিশন দেওয়া, এর অর্থ বুঝার ব্যাপারে ধৈর্যশীল হতে না পারো, তাহলে তুমি কোন মানুষের লিখা এরচেয়ে জটিল বই কিভাবে আয়ত্ত্ব করতে সক্ষম হবে? 

(৪) ক্বুরআন মানুষের অন্তরকে উন্মুক্ত ও সজীব করে তুলে। অনেক শিক্ষিত বাবা-মা তাদের সন্তানের চিন্তা শক্তি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরণের বই পড়ানোর অভ্যাস করে। মানুষের লিখা দুনিয়াবী বই পড়ে যদি তারা এমন উপকারিতা আশা করে তাহলে একবার চিন্তা করুন, আল্লাহ সুবহা'নাহু তাআ'লার নাযিলকৃত কিতাব, (যা দুনিয়া এবং আখিরাতের যাবতীয় কল্যাণের দিক নির্দেশনা দেয়), এই ক্বুরআন তিলাওয়াত করা, মুখস্থ করা, এর অর্থ বুঝা এবং সে অনুযায়ী আমল করার মাঝে কি উপকার রয়েছে! 

(৫) ক্বুরআন বেশি বেশি পড়ার বরকতে আল্লাহ তাআ'লার উপর তোমার তাওয়াক্কুল বৃদ্ধি পাবে। 

(৬) ক্বুরআন হিফয করার মাধ্যমে তুমি,

لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ

“আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই।”

এবং, 

سُبۡحَٰنَكَ لَا عِلۡمَ لَنَآ إِلَّا مَا عَلَّمۡتَنَآۖ

“(হে আল্লাহ!) আপনি মহান; পবিত্র। আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন, তা ছাড়া আমাদের তো অন্য কোন জ্ঞানই নেই।” সুরা আল-বাক্বারাহঃ ৩২।

এই কথার প্রকৃত অর্থ বুঝতে সক্ষম হবে। 

(৭) ক্বুরআন হিফয করা তোমার সময়কে নষ্টকারী ব্যক্তি বা অনর্থক কাজ থেকে তোমাকে হেফাযত করবে। তুমি জানতে পারবে যে, মাত্র পাচ মিনিট সময়ের মূল কত।” 


যাদের পক্ষে ক্বুরআন মুখস্থ করা সম্ভব নয় তারা কি করবে?

যাদের স্মৃতিশক্তি একেবারে দুর্বল হয়ে পড়েছে, ব্যস্ততার কারণে যারা মোটেও অবসর সময় পান না, তারা অন্তত অল্প কিছু মুখস্থ করবেন এবং সুযোগ পেলেই বেশি বেশি ক্বুরআন পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করবেন, যাতে করে আপনি ক্বুরআনের বরকত থেকে একেবারে বঞ্চিত না থাকেন। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক্ব দান করুন। 


কিভাবে ক্বুরআন মুখস্থ করা আরম্ভ করবেন?

ক্বুরআন মুখস্থ করা শুরু করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, শুরু থেকে অথবা শেষ পারা থেকে।

তবে যারা ঘরে বসে নিজে নিজে শুরু করতে চান তাদের জন্য সহজ একটা নির্দেশনাঃ

(১) যাদের শেষের সুরাগুলো মুখস্থ নেই তারা প্রথমে সুরা যিলযাল থেকে সুরা নাস পর্যন্ত মুখস্থ করুন।

(২) এরপর সুরা নাবা থেকে শুরু করে ক্বুরআনের ৩০-তম পারা মুখস্থ করুন।

(৩) এরপর সুরা মুলক থেকে শুরু করে ক্বুরআনের ২৯-তম পারা মুখস্থ করুন।

(৪) এরপর আপনি ইচ্ছা করেলে সুরা আল-বাক্বারাহ থেকে মুখস্থ শুরু করতে পারেন, অথবা সুরা আল-কাহাফ মুখস্থ করতে পারেন, অথবা ক্বুরআনের ২৮-তম পারা মুখস্থ শুরু করতে পারেন। কারণ এই সুরাগুলো ছোট, মুখস্থ করা তুলনামূলক সহজ। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ