Ticker

5/recent/ticker-posts

হৃদয়ের বসন্ত আল-ক্বুরআন



মানুষের শরীর যেমন খাদ্য, পানীয়, আরামদায়ক বাসগৃহ, স্ত্রী-সংগ ইত্যাদি দুনিয়াবী নিয়ামত দ্বারা শান্তি এবং তৃপ্তি লাভ করে, ঠিক তেমনি আল-ক্বুরআন দ্বারা মানুষের ‘ক্বালব’ বা হৃদয় সঠিক পথ, সুখ-শান্তি, নিরাপত্তা এবং তৃপ্তি লাভ করে। 

___________________________________

(১) আল্লাহ তাআ’লা ক্বুরআনকে সরাসরি “রূহ” বলে আখ্যায়িত করেছেন

وَ کَذٰلِکَ  اَوۡحَیۡنَاۤ  اِلَیۡکَ رُوۡحًا مِّنۡ اَمۡرِنَا ؕ

“আর এভাবে আমি আপনার প্রতি আমার নির্দেশ থেকে রূহকে ওয়াহী করেছি।” সুরা আশ-শূরাঃ ৫২।

এই আয়াতে বর্ণিত “রূহ” শব্দ দ্বারা ক্বুরআনকে বোঝানো হয়েছে। কারণ, ক্বুরআন হচ্ছে এমন রূহ, যার দ্বারা অন্তরসমূহ জীবন লাভ করে। তাফসীরে জালালাইন।

শায়খ সালাহউদ্দিন ইউসুফ রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “এই আয়াতে رُوْحٌ (রূহ) বা আত্মার অর্থ হচ্ছে আল-ক্বুরআন। ক্বুরআনকে روح (আত্মা) বলে এইজন্য আখ্যায়িত করা হয়েছে, ক্বুরআন দ্বারা মানুষে অন্তঃকরণের জীবন লাভ হয়, যেমনিভাবে আত্মার মধ্যে মানুষের জীবন রহস্য লুক্কায়িত থাকে।” তাফসীর আহসানুল বায়ান।

___________________________________

(২) আল্লাহ ক্বুরআনকে মানুষের জন্য শিফা, হেদায়াত এবং রহমত স্বরূপ নাযিল করেছেন

আল্লাহ তাআলা বলেন, 

يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ قَدۡ جَآءَتۡكُم مَّوۡعِظَةٞ مِّن رَّبِّكُمۡ وَشِفَآءٞ لِّمَا فِي ٱلصُّدُورِ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٞ لِّلۡمُؤۡمِنِينَ ٥٧

“হে মানুষেরা! তোমাদের নিকট উপদেশবাণী (ক্বুরআন) এসেছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এবং এটি অন্তরের রোগের শিফা (নিরাময়) ও হেদায়াত (পথনির্দেশ) ও মুমিনদের জন্য রহমত (দয়া)।” সুরা ইউনুসঃ ৫৭। 

ক্বুরআনের মুফাসসিরগণ আলোচনা করেছেন, এই আয়াতে শিফা দ্বারা অন্তর এবং দেহ, উভয়ের জন্যই তা শিফা। দুঃশ্চিন্তা, পেরেশানি, ভয়, আতংক, হতাশা, মানসিক অবসাদ বা অশান্তি এমন কোনো অবস্থা নাই, যেখানে ক্বুরআন তার প্রতি ঈমান আনয়নকারীদের পাশে না দাঁড়ায়, মুমিনদের সমস্ত সমস্যার সমাধানে সঠিক রাস্তা দেখায়। এর অন্তর্নিহিত অর্থ যেমন এইগুলোর চিকিৎসা। এছাড়া আপনি শুধুমাত্র ক্বুরআন তেলাওয়াত শুনে দেখুন, আশ্চর্যজনকভাবে তা আমাদের মনে সাহস ও মনোবল ফিরিয়ে আনে।

আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেন, 

قُلۡ نَزَّلَهُۥ رُوحُ ٱلۡقُدُسِ مِن رَّبِّكَ بِٱلۡحَقِّ لِيُثَبِّتَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَهُدٗى وَبُشۡرَىٰ لِلۡمُسۡلِمِينَ ١٠٢

“(হে নবী!) আপনি বলুন, আপনার প্রতিপালকের নিকট হতে জিবরীল সত্যসহ ক্বুরআন অবতীর্ণ করেছেন, যারা বিশ্বাসী তাদেরকে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এবং তা মুসলিম (আত্মসমর্পণকারীদের) জন্য পথনির্দেশ ও সুসংবাদ স্বরূপ।” সুরা নাহলঃ ১০২। 

___________________________________

(৩) আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালোবাসা অর্জনের একটি মাধ্যম হচ্ছে ক্বুরআন তিলাওয়াত করাঃ 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালোবাসতে চায়, সে যেন মুসহাফ থেকে তেলাওয়াত করে।” সহীহ আল-জামিঃ ৬২৮৯।  

সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভালোবাসার মিষ্টতা পেতে চায়, তার উচিত নিয়মিত ক্বুরআন তিলাওয়াত করতে সচেষ্ট হওয়া।  

___________________________________

(৪) হাদীসে বর্ণিত সুন্দর একটি দুআর অংশ বিশেষ

اللَّهُمَّ اجْعَلْ القُرْآنَ رَبِيْعَ قَلْبِي، وَنُوْرَ صَدْرِي، وَجَلاَءَ حُزْنِي، وَذَهَابَ هَمِّيْ

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাজআ’লাল ক্বুরআ-না রবীআ’ ক্বালবী, ওয়া নূরা ছদরী, ওয়া জালা-আ হুযনী, ওয়া যাহা-বা হাম্মী।

হে আল্লাহ! তুমি ক্বুরআনকে বানিয়ে দাও আমার হৃদয়ের বসন্ত, আমার বক্ষের নূর (জ্যোতি), আমার দুঃখের অপসারণকারী এবং দুঃশ্চিন্তার দূরকারী।

উৎসঃ মুসনাদে আহমাদঃ ১/৩৯১, নং-৩৭১, শায়খ আলবানী রহি’মাহুল্লাহ তাঁর সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহাহ গ্রন্থে ১/৩৩৭ একে সহীহ বলেছেন। 

___________________________________

“ক্বুরআনকে আমার হৃদয়ের বসন্ত বানিয়ে দাও” কথাটির অর্থ কি?

ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “এই দুয়ার অর্থ হচ্ছে, যেমন বসন্তকালে বৃষ্টির পানি দ্বারা জমীনের গাছ-পালা প্রাণ ফিরে পেয়ে সবুজ শ্যামল হয়ে উঠে, ঠিক তেমনিভাবে ক্বুরআন যেন দুয়াকারীর অন্তরে প্রাণ ফিরিয়ে আনে।” 

ইমাম আলী ক্বারী রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “যেমন বসন্তকালে মৃত যমীনের মধ্য থেকে প্রাণের বিকাশের মাধ্যমে আল্লাহর দয়ার বহিঃপ্রকাশ ঘটে, তেমনিভাবে ক্বুরআন যেন দুয়াকারীর হৃদয়ের অন্ধকার ও কুফুরী দূর করে ঈমান ও ইলম আনয়নের মাধ্যমে আল্লাহর ক্বুদরতের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।” 

___________________________________

(৫) আল-ক্বুরআন মুমিনের সুখ-শান্তির আধার

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেন, “যে ব্যক্তি ক্বুরআনকে ভালোবাসে, সে যেন আনন্দিত হয়। আর যে ব্যক্তি ক্বুরআন তিলাওয়াত করে, তার জন্য সুসংবাদ।” সুনানে আদ-দারেমীঃ ৩৩৬২, সহীহ। ইবনু আবী শাইবাঃ ১০১২৯, তাফসীর সাঈদ ইবনু মানসুরঃ ১/১২; ফাযায়েল নং-৩।

জনৈক ব্যক্তি একজন সালাফকে (পূর্ব যুগের একজন মনীষিকে) জিজ্ঞাসা করলো, “আমাদের প্রতিদিন কতটুকু ক্বুরআন পড়া উচিত।” উত্তরে তিনি বলেন, “তুমি যতটুকু সুখী হতে চাও (তত বেশি ক্বুরআন পড়ো)।” ইবনে তাইমিয়া রহি’মাহুল্লাহ, মাজমু আল-ফাতাওয়াঃ ৭/৪৯৩।

___________________________________

(৬) জীবন সুখী হতে চান? আপনার হৃদয়টাকে ক্বুরআন দ্বারা পূর্ণ করুন 

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেছেন, “মানুষের অন্তর হচ্ছে একটা পাত্রের মতো, সুতরাং তোমার অন্তরকে ক্বুরআন ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা পূর্ণ করোনা।” হিলইয়াতুল আওলিয়াঃ ১/১৩১।

ইবনে তাইমিয়া রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “বুদ্ধি ও আত্মাকে সতেজ করা, শরীরকে হেফাজতে রাখা এবং বান্দার সুখের নিশ্চয়তার জন্য নিয়মিত ক্বুরআন পড়া ও গবেষণা করার চাইতে অধিক উপকারী আর কোন কিছুর কথা আমার জানা নাই।” মাজমু আল-ফাতাওয়াঃ ৭/৪৯৩।   

খাব্বাব বিন আল-আরাত্ত (আত-তামীমি) রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য তোমার ইচ্ছামতো যে কোন নেক আমল করতে পারো। তবে তুমি জেনে রাখো, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য আল্লাহর ক্বালামের চেয়ে প্রিয় অন্য কোন নেক আমল তুমি খুঁজে পাবে না।” মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাহঃ ১০/৫১০।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ