Ticker

5/recent/ticker-posts

হৃদয়কে কাঁপিয়ে দেয়া কুরআনের একটি আয়াত

 


আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘‘তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ্ তোমাদের ক্ষমা করুন?’’ [সুরা আন-নুর, আয়াত: ২২]


এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছিলো যে প্রেক্ষিতে, সেটি আমাদের জন্য দারুণ শিক্ষণীয়।


এই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি সায়্যিদুনা আবু বকর (রা.) অনেক নিঃস্ব ও অসহায় মুসলিমকে সচ্ছলতার পথ দেখিয়েছেন। অনেক গোলামকে কিনে এনে আজাদ করে দিয়েছেন। অনেককে নিজেই দেখাশোনা করেছেন। হযরত মিসতাহ্ (রা.) ছিলেন তাদেরই একজন। তিনি ছিলেন একাধারে একজন মুহাজির এবং আবু বকরের দূরসম্পর্কের আত্মীয়। এই দরিদ্র সাহাবিকে আবু বকর (রা.) নিয়মিতই অর্থ দিয়ে সাহায্য করতেন। ইফক (আম্মাজান আয়িশা রা.-এর উপর যিনার অপবাদ)-এর ঘটনায় মুনাফিকদের পাশাপাশি কয়েকজন মুসলিমও শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে আম্মাজান আয়িশা (রা.)-এর ব্যাপারে বিরূপ কথাবার্তা বলেছিলেন। হযরত মিসতাহ্ (রা.) ছিলেন সেই কয়েকজন মুসলিমের একজন। এটি জানার পর আবু বকর (রা.) ভীষণ মর্মাহত হন। এমনকি মনের দুঃখে ও ক্ষোভে তিনি শপথ করে বসেন যে, ভবিষ্যতে আর মিসতাহকে কোনো সাহায্য করবেন না।


আবু বকরের মতো মহান সাহাবির এই শপথের ব্যাপারে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা চুপ থাকেননি। তিনি হৃদয়গ্রাহী ভাষায় আয়াত নাযিল করেন—‘‘তোমাদের মধ্যে ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারীরা যেন আত্মীয়দের, নিঃস্বদের এবং আল্লাহর পথে হিজরতকারীদের দান না করার ব্যাপারে শপথ না করে। তারা যেন ক্ষমা করে এবং (দোষ-ত্রুটি) উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ্ তোমাদের ক্ষমা করুন? আল্লাহ্ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’ [সূরা আন নূর, আয়াত: ২২]


আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আত্মীয়দের, নিঃস্বদের এবং আল্লাহর পথে হিজরতকারীদের’ কথা। মূলত মিসতাহ (রা.)-এর বৈশিষ্ট্য ছিলো এগুলো, তাই আল্লাহ আবু বকরকে আবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, মিসতাহ নিঃস্ব, আবার আত্মীয়, একই সাথে আল্লাহর পথে হিজরতকারী (মুহাজির)। সুতরাং, এই ক্যাটাগরির মানুষ স্বাভাবিকভাবেই দয়া পাওয়ার যোগ্য।


তাফসিরে আহসানুল বায়ানে বলা হয়েছে, ‘‘আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর এই শপথ যদিও মানব প্রকৃতির অনুকূলই ছিল, তবুও ‘সিদ্দিক’-এর মর্যাদা এর চেয়ে উচ্চ চরিত্রের দাবিদার ছিলো। সুতরাং তা আল্লাহর পছন্দ ছিলো না। যার কারণে তিনি এই আয়াত অবতীর্ণ করলেন, যাতে অত্যন্ত স্নেহ-বাৎসল্যের সাথে তাঁর তাড়াহুড়াপ্রবণ মানবীয় আচরণের উপর সতর্ক করলেন যে, ‘তোমাদেরও ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকে। আর তোমরা চাও যে, মহান আল্লাহ তোমাদের সে ভুল-ত্রুটিকে ক্ষমা করে দেন। তাহলে তোমরা অন্যের সাথে ক্ষমা-সুন্দর আচরণ করো না কেন? তোমরা কি চাও না যে, মহান আল্লাহ তোমাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করুন?’ কুরআনের এই বর্ণনা-ভঙ্গি এতই প্রভাব বিস্তারকারী ছিলো যে, তা শোনার সাথে সাথে আবু বকর (রা.)-এর জবান দিয়ে বের হলো, ‘কেন নয়? হে আমাদের রব! আমরা নিশ্চয় চাই যে, আপনি আমাদের ক্ষমা করুন।’ এরপর তিনি কসমের কাফফারা দিয়ে পূর্বের ন্যায় মিসতাহকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে শুরু করেন।’ [তাফসিরে ফাতহুল কাদির ও ইবনে কাসির অবলম্বনে]


আমরা তো কিছু একটা হলেই মানুষকে দূরে ঠেলে দেই; তাকে ক্ষমা করতে পারি না। বিশেষত সে যদি হয় আমাদের অধিনস্থ কেউ, তাহলে তো কথাই নেই। অথচ আল্লাহ্ বলেন, ‘‘যারা সচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষকে ক্ষমা করে; বস্তুত আল্লাহ্ সৎকর্মশীলদেরই ভালোবাসেন।’’ [সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৪]


অতএব, কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে আমাদের কষ্ট দেয়, তবে আমরা যথাসাধ্য সেগুলো ক্ষমা করতে চেষ্টা করবো। তবে, কোনো অহংকারী জালিমকে বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা করবো। কারণ সে ক্ষমাকে দুর্বলতা মনে করে এবং অন্যদের উপরও জুলুম করার প্রেরণা লাভ করে।


[সংগৃহীত]

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ