Ticker

5/recent/ticker-posts

জুমুআ’হর দিনে সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব



(১)

عن أبي سعيد الخدري قال : " من قرأ سورة الكهف ليلة الجمعة أضاء له من النور فيما بينه وبين البيت العتيق " . رواه الدارمي ( 3407 ) . والحديث : صححه الشيخ الألباني في " صحيح الجامع " ( 6471 ) .


আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেন, “যে ব্যক্তি জুমুআ’হর রাত্রিতে সুরা কাহাফ পাঠ করবে তার জন্য স্বীয় অবস্থানের জায়গা হতে পবিত্র মক্কা পর্যন্ত একটি নূর হবে।”

দারেমীঃ ৩৪০৭। শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী রহি’মাহুল্লাহ এই হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহ আল-জামিঃ ৬৪৭১।


(২)

ن قرأ سورة الكهف في يوم الجمعة أضاء له من النور ما بين الجمعتين " .

رواه الحاكم ( 2 / 399 ) والبيهقي ( 3 / 249 ) . والحديث : قال ابن حجر في " تخريج الأذكار " : حديث حسن ، وقال : وهو أقوى ما ورد في قراءة سورة الكهف .

انظر : " فيض القدير " ( 6 / 198 )


“যে ব্যক্তি জুমুআ’হর দিনে সুরা কাহাফ পাঠ করবে, তার জন্য পরবর্তী জুমুআ’হ পর্যন্ত আলোকময় হবে।” হাকিমঃ ২/৩৯৯, বায়হাক্বীঃ ৩/২৪৯।

উপরোক্ত দুইটি হাদীস মাওক্বুফ এবং এগুলর সনদ নির্ভরযোগ্য। ইমাম ইবনে হাজার তাখরীজ আল-আযকার গ্রন্থে বলেন, “এই হাদীসটি হাসান। সুরা কাহাফ তিলাওয়াত সংক্রান্ত হাদীস সমূহের মাঝে এই হাদীস সবচাইতে শক্তিশালী।”

শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী রহি’মাহুল্লাহ এই হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহ আল-জামিঃ ৬৪৭০।


(৩) একদল আলেম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকে জুমুআ’হর দিনে সুরা কাহাফ তিলাওয়াত সংক্রান্ত মারফূ হাদীসের সনদ প্রত্যেকটা এককভাবে দুর্বল বলায় সেইগুলো উল্লেখ করা হলোনা।

___________________________________

আলেমদের ফাতাওয়াঃ

(১) অধিকাংশ হানাফী, শাফেয়ী এবং হাম্বালী মাযহাবের আলেমগণের নিকট জুমুয়াহর দিনে সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব।

(২) মালেকী মাযহাবের বিখ্যাত আলেম ইবনে আল-হাজ্জ রহি’মাহুল্লাহ একই মত দিয়েছেন।

___________________________________

(৩) হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী রহি’মাহুল্লাহ তাঁর আমালীতে বলেছেন, “কিছু বর্ণনায় জুমুআ’হর দিনে এবং কিছু বর্ণনায় জুমুআ’হর রাত্রিতে সুরা কাহাফ পড়ার কথা বলা হয়েছে। এই বর্ণনাগুলো এইভাবে সমন্বয় করা যায় যে, এর অর্থ হচ্ছে জুমুআ’হর দিন বলতে জুমুআ’হর দিন এবং রাত দুটোকেই বুঝায়।” ফয়জুল ক্বাদীরঃ ৬/১৯৯।

___________________________________

(৪) ইমাম শাওকানী রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “এক জুমাহ্ থেকে অন্য জুমাহ পর্যন্ত নূর বা আলোকদানের অর্থ হচ্ছে এই দীর্ঘ সময় তার কিরাআতের প্রভাব সে পাবে এবং এ এক সপ্তাহ পর্যন্ত তার সাওয়াব সে পেতে থাকবে।”

___________________________________

(৫) শায়খ উবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী রহি’মাহুল্লাহ বলেন “জুমার দিনে যে সূরা আল কাহাফ পাঠ করবে তার নূর এক জুমাহ্ হতে অন্য জুমাহ্ পর্যন্ত আলোকজ্জ্বল হয়ে থাকবে। এ উজ্জ্বলতা তার কলবে হবে, না হয় তার কবরে হবে, অথবা তার হাশরে হবে। এ নূর কি ঐ সূরার নূর না তা সাওয়াবের নূর? কেউ বলেছেন, হিদায়াতের নূর এবং ঈমানের নূর। হিদায়াতের নূর হওয়াই অধিক যুক্তিযুক্ত।”

___________________________________

(৬) শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ রহি’মাহুল্লাহ বলেছেন, “জুমুআ’হর দিনে সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করার ফযীলত সংক্রান্ত বেশ কিছু হাদীস রয়েছে। যদিও এই হাদীসগুলো জয়ীফ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত তবে বিদ্বানগণ মনে করেন যে, এই হাদীসের একটি অপরকে সমর্থন করে এবং একারণে এই হাদীসগুলোকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করা যায়। হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, (জুমুআ’হর দিনে সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা) তাঁর আমল ছিলো। সুতরাং (আবু সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর মতো) মহান একজন সাহাবীর অনুসরণে এই হাদীসের উপর আমল করা আমাদের জন্য মুস্তাহাব। কেননা (মারফূ) হাদীস সমূহ একটি আরেকটিকে সমর্থন করে এছাড়া আবু সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর আমল (মারফূ) হাদীস সমূহকে আরো শক্তিশালী করে।” শায়খ ইবনে বাজ রহি’মাহুল্লাহর ফাতাওয়া সংকলনঃ ২৫/১৯৭।

___________________________________

(৭) শায়খ মুহা’ম্মদ বিন সালিহ আল-উষায়মিন রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “জুমুআ’হর দিনে সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা সুন্নাহ এবং এতে অনেক সওয়াব রয়েছে। নিয়মিতভাবে এই সুরা তিলাওয়াত করা সুন্নাহ, যা জুমুআ'হর দিনে মাসনূন একটি আমল।” ফাতাওয়া নূর আলাদ-দারব।

___________________________________

(৮) শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী রহি’মাহুল্লাহ বলেছেন, “হ্যা, জুমুআ’হর দিনে সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব। যদি কোন ব্যক্তির জন্য সম্পূর্ণ সুরা একবারে পড়তে কষ্ট হয় তাহলে সে ভেংগে ভেঙ্গে পড়তে পারে। তবে নীতি হচ্ছে একবারে পড়ে শেষ করা।” সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান-নূরঃ ৮১৬।

___________________________________

(৯) শায়খ সালিহ আল-উসায়মী হা’ফিজাহুল্লাহ (বর্তমানে জীবিত একজন আলেমদের একজন) তিনি বলেন, “জুমুআ’হর দিনে জলদি জলদি সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুস্তাহাব একটি আমল। দেরী না করে জুমুআ’হর দিনে সুরা কাহাফ জলদি করে তিলাওয়াত করা উচিত একারণে যে, এতে একজন ব্যক্তির কল্যাণের প্রতি উৎসাহ প্রকাশ পায় এবং এতে অলসতা করে পরে পড়বো বলে ফেলে রাখার কারণে এই আমল ছুটে যাওয়া থেকে বাঁচা যায়। এমনকি কোন ব্যক্তি জুমুআ’হর রাত্রিতে (অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে) সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করতে পারে।”

৮-ই রমযান, ১৪৪১ হিজরী তারিখে শায়খের অফিসিয়াল টুইটার একাউন্ট থেকে সংগৃহীত।

___________________________________

(১০) শায়খ ড. খালিদ আল-মুসলিহ হা’ফিজাহুল্লাহ বলেছেন, “(আমার নিকট) যা সঠিক বলে প্রতীয়মান হয়েছে তা হচ্ছে, (জুমুআ’হর দিনে সুরা কাহাফ তিলাওয়াতের ফযীলত সংক্রান্ত কোন হাদীস) সরাসরি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকে প্রমাণিত হয়নি। এ সংক্রান্ত অনেক হাদীসের উপর ভিতি করে শাফেয়ী, হানাফী এবং হাম্বালী মাযহাবের মত হচ্ছে জুমুআ’হর দিনে সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব। কিছু আলেম আবু সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর পক্ষ থেকে (মাওক্বুফ) হাদীসের উপর নির্ভর করে এই আমলকে মুস্তাহাব বলেছেন। তাঁরা আরও বলেছেন, (আবু সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বর্ণিত হাদীসের বক্তব্য ওয়াহীর জ্ঞান ছাড়া) কোন মানুষের বক্তব্য হতে পারেনা। একারণে যদিও এই হাদীস (সনদগত দিক থেকে) মাওক্বুফ কিন্তু হুকুমের দিক থেকে এই হাদীস মারফূ।

শায়খ ড. খালিদ আল-মুসলিহ হা’ফিজাহুল্লাহ এরপর বলেছেন, “আর এটাই হচ্ছে সঠিক মত। আল্লাহ ভালো জানেন।”

___________________________________

উৎস এবং কৃতজ্ঞতা:

(১) Saudi Ministry of Islamic Affairs, Dawah and Guidance

(২) শায়খ ড. খালিদ আল-মুসলিহ

(৩) শায়খ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ

(৪) islamweb

(৫) Abu Aaliyah Abdullah Battle (কাতার)

(৬) Kabir Al Asfar (নাইজেরিয়া)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ