Ticker

5/recent/ticker-posts

একটি উত্তম দু'আ

الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

'যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য' -(সূরা ফাতিহা, আয়াত- ২)



ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, 'আলহামদুলিল্লাহ' এর অর্থ এই যে, কৃতজ্ঞতা শুধু আল্লাহর জন্য। তিনি ছাড়া আর কেউ এর যোগ্য নয়, সে সৃষ্ট জীবের যে কেউ হোক না কেন।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, প্রত্যেক কৃতজ্ঞের কৃতজ্ঞতা প্রকাশক কথা হলো 'আলহামদুলিল্লাহ'। কুরতবী (রঃ) ইবনে জারীরের (রঃ) কথাকে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ করার জন্যে এ দলিল বর্ণনা করেছেন যে, যদি কেউ 'আলহামদুল্লাহি শুকরান' বলে তবে এটাও নির্ভুল হবে।

'আলহামদুল্লাহ' এর ভাবার্থ কি? -এই প্রশ্নের জবাবে হযরত আলী (রা) বলেন, 'আল্লাহ তা'আলা এই কথাটিকে নিজের জন্য পছন্দ করেছেন এবং কোন কোন বর্ণনায় আছে যে, এটা বললে আল্লাহকে খুব খুশি লাগে।'

যরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ এটা কৃতজ্ঞতা প্রকাশক বাক্য । এর উত্তরে আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করলো । সুতরাং এই বাক্যটির মধ্যে শুকর ছাড়া আল্লাহর দানসমূহ, হেদায়াত, অনুগ্রহ প্রভৃতির স্বীকারোক্তিও রয়েছে ।

একটি হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা 'আলহামদুল্লাহী রব্বিল আলআমিন' বললে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়ে যাবে। তখন তিনি তোমাদের উপর বরকত দান করবেন ।

"‘রব’ শব্দটিকে আরবী ভাষায় তিনটি অর্থে ব্যবহার করা হয়। এক, মালিক ও প্রভু। দুই, অভিভাবক, প্রতিপালনকারী, রক্ষণাবেক্ষণকারী ও সংরক্ষণকারী। তিন, সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, শাসনকর্তা পরিচালক ও সংগঠক।" [তাফহীমুল কুরআন]

হযরত আসওয়া বিন সারী (রা) একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আরয করলেন, আমি মহান আল্লাহর প্রশংসার কয়েকটি কবিতা রচনা করেছি। অনুমতি পেলে শুনিয়ে দেবো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা'আলা নিজের প্রশংসা শুনতে পছন্দ করেন।

"সুতরাং নিঃসন্দেহে একথাই বলতে হয় যে, 'আলহামদুল্লাহ' যদিও প্রশংসার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে, কিন্তু এর মধ্যে অতি সুক্ষ্মতার সাথে বর্ণনা করা হয়েছে যে, সকল সৃষ্ট বস্তুর উপাসনা রহিত করা হলো। তাছাড়া এর দ্বারা অত্যন্ত আকর্ষণীয় পদ্ধতিতে একত্ববাদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।"  [তাফসীরে মা'আরিফুল কুরআন]

সুনান-ই-ইবনে মাজাহর রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাঁর বান্দাকে কিছু দান করার পর যদি ঐ ব্যক্তি তার জন্য আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করে, তবে তার প্রদত্ত বস্তুই গৃহীত বস্তু হতে উত্তম হবে।

হযরত জাবির (রাঃ) এর একটি মারফূ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, সর্বোত্তম যিকির হলো 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু' এবং সর্বোত্তম প্রার্থনা হলো 'আলহামদুলিল্লাহ।

"'আলহামদুলিল্লাহ্' কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপক বাক্য। কারো মধ্যে যদি গুণ, সৌন্দর্য কিংবা কর্তৃত্ব থাকে, তবে তাও মহান আল্লাহ কর্তৃক সৃষ্ট। অতএব প্রশংসার অধিকারী তিনিই। আলহামদুলিল্লাহর বহু ফযীলতের কথা হাদীস সমূহে এসেছে। এক হাদীসে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' কে উত্তম যিকর বলা হয়েছে এবং 'আলহামদুলিল্লাহ্' কে উত্তম দু'আ বলা হয়েছে। অপর এক হাদীসে এসেছে 'আলহামদুলিল্লাহ্' দাঁড়িপাল্লা ভরতি করে দেয়।"  [তাফসীর আহসানুল বায়ান]

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, যদি আল্লাহ আমার উম্মতের মধ্যে কোন লোককে দুনিয়া দান করে এবং সে যদি তার জন্য 'আলহামদুলিল্লাহ' পাঠ করে তবে এ কথাটি সমস্ত দুনিয়া জাহান হতে উত্তম হবে।



তথ্যসূত্র:
  • তাফসীর ইবনে কাছীর
  • তাফসীরে মা'আরিফুল কুরআন
  • তাফহীমুল কুরআন
  • তাফসীর আহসানুল বায়ান


প্রাসঙ্গিক লিখা
  1. সূরা ফাতিহা : উম্মুল কিতাব
  2. একটি বরকতময় আয়াত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ