بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
অর্থ: "(আরম্ভ করছি) পরম করুণাময় অসীম দয়াময় আল্লাহর নামে।" -(সূরা ফাতিহা, আয়াত- ১)
এই আয়াতটি সূরা ফাতিহার প্রথম আয়াত। আয়াতটি খুবই মর্যাদাপূর্ণ ও শয়তানের জন্য হুমকি স্বরূপ। নিম্নে এর তাফসীর তুলে ধরা হলো-
ইবনু মরদুওয়াই এর তাফসীরে রয়েছে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- 'আমার উপর এমন একটি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে যার মতো আয়াত হযরত সুলাইমান (আ) ছাড়া অন্য কোন নবীর উপর অবতীর্ণ হয়নি। আয়াতটি হলো- 'বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।'
হযরত যাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, যখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়, তখন পূর্ব দিকে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়, বায়ুমন্ডলী স্তব্ধ হয়ে যায়, তরঙ্গ বিক্ষুব্ধ সমুদ্র প্রশান্ত হয়ে উঠে । জন্তুগুলো কান লাগিয়ে মনযোগ সহকারে শুনতে থাকে, আকাশ থেকে অগ্নিশিখা নিক্ষিপ্ত হয়ে শয়তানকে বিতারন করে এবং বিশ্ব প্রভু স্বীয় সম্মান ও মর্যাদার কসম করে বলেনঃ 'যে জিনিসের উপর আমার নাম নেওয়া হবে তাতে অবশ্যই বরকত হবে।'
ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে, দোযখের ১৯ টি দারোগা হতে যে বাঁচতে চায় সে যেন 'বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম' পাঠ করে। এতেও ঘটেছে ১৯ টি (আরবী) অক্ষরের সমাবেশ। প্রত্যেকটি অক্ষর প্রত্যেক ফেরেশতার জন্য রক্ষক হিসেবে কাজ করবে।
মুসনাদ-ই-আহমাদের মধ্যে রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সোয়ারীর উপর তাঁর পিছনে যে সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু উপবিষ্ট ছিলেন তাঁর বর্ণাটি এই - 'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উষ্ট্রীটির কিছু পদস্খলন ঘটলে, আমি বললাম যে শয়তানের সর্বনাশ হোক। তখন তিনি বলেনঃ এরূপ বলো না, এতে শয়তান গর্বিত হয় এবং মনে করে যে, যেন সেইই স্বীয় শক্তির বলে ফেলে দিয়েছে। তবে হ্যাঁ 'বিসমিল্লাহ' বলাতে সে মাছির মতো লাঞ্ছিত ও হৃদগর্ভ হয়ে পড়ে।' ইমাম নাসাঈ রহিমাহুল্লাহ তার স্বীয় কিতাব 'আমালুল ইয়াওমে ওয়াল লাইলাহ' এর মধ্যে এবং ইবনে মরদুওয়া রহিমাহুল্লাহ স্বীয় তাফসীরের মধ্যে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং সাহাবীর (রা) নাম বলেছেনঃ উসামা বিন উমায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু।
এজন্য প্রত্যেক কাজ ও কথার প্রারম্ভে 'বিসমিল্লাহ' বলা মুসতাহাব। হাদীসে আছে যে, 'বিসমিল্লাহ দ্বারা যে কাজ আরম্ভ হয় না তা কল্যাণহীন ও বরকতশূন্য'।
মুসনাদ-ই-আহমাদ এবং সুনানের মধ্যে রয়েছে হযরত আবু হুরায়রা (রা) হযরত সাঈদ বিন যায়েদ (রা) এবং হযরত আবু সাঈদ (রা) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ 'যে ব্যক্তি ওযুর সময় বিসমিল্লাহ বলে না, তার ওযু হয় না'। (হাদীসটি হাসান বা উত্তম)
কোন কোন আলেম ওযুর সময় বিসমিল্লাহ বলা ওয়াজিব বলে থাকেন।
প্রাণী জবেহ কারার সময়ও বিসমিল্লাহ বলা মুসতাহাব । ইমাম শাফেঈ রহিমাহুল্লাহ এবং একটি দলিল ধারণা এটাই।
সহীহ বুখারী ও মধ্যে হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "তোমাদের মধ্যে কেউ স্বীয় স্ত্রীর সঙ্গে মিলনের ইচ্ছে করলে সে যেন এটা পাঠ করেঃ
'বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জ্বান্নিবনাশ্ শায়ত্বা-না ওয়া জান্নিবিশ্ শায়ত্বা-না মা রাযাক্বতানা'
অর্থঃ আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি । হে আল্লাহ! আপনি আমাদের এবং যা আমাদেরকে দান করবেন তাকেও শয়তানের কবল হতে রক্ষা করেন ।
তিনি (সা) আরও বলেন যে, 'এই মিলনের ফলে যদি সে গর্ভধারণ করে তবে শয়তান সেই সন্তানের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।'
"জাহেলিয়াতের যুগের লোকেরা প্রত্যেক কাজ তাদের উপাশ্য দেবদেবীদের নামে শুরু করতো। এ প্রথা রহিত করার জন্যই জিবরাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম যে আয়াত নিয়ে এসেছিলেন তাতে আল্লাহর নামে কুরআন তিলাওয়াত আরম্ভ করার আদেশ দেয়া হয়েছে। যথা- 'পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে'।" -[মা'আরিফুল কুরআন]
হুদায়বিয়ার সন্ধিকালে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সুহাইল ইবনে আমর এর মধ্যকার চুক্তিপত্র রচনার সময় আলী ইবনে আবি তালিব (রা) কে বললেন প্রথমে 'বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম' লিখতে। সুহাইল বললেন, না; 'বিসমিকা আল্লাহুম্মা' -অর্থাৎ 'হে আল্লাহ্ তোমার নামে লিখতে হবে। কেননা আমরা রহমানকে চিনি না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুহাইলের কথা মেনে নিলেন। পরর্তীতে সূরা নামলে 'এই চিঠি সুলায়মানের নিকট থেকে এসেছে এবং তা দয়াময় মেহেরবান আল্লাহ্ তা'আলার নামে শুরু করা হয়েছে' নাযিল হওয়ার পরই 'বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম' ব্যবহৃত হতে থাকে। [তাফসির আল জালালাইন]
প্রাসঙ্গিক বিষয়:
তথ্যসূত্র:
- তাফসীর ইবনে কাছীর
- তাফসির আল জালালাইন
- মা'আরিফুল কুরআন
প্রাসঙ্গিক বিষয়:
1 মন্তব্যসমূহ
জাযাকাল্লাহ খাইরান ফা-ইন্নাল্লাহা শাকিরুণ
উত্তরমুছুন