Ticker

5/recent/ticker-posts

আসহাবে কাহাফ এর ঘটনা

আসহাবে কাহাফ ও যুলকারনাইন সম্পর্কে আয়াত নাযিল হওয়ার পটভূমি সম্বন্ধে মুহাম্মদ ইবন ইসহাক ও অন্যান্য সীরাত গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, কুরাইশগণ মদীনার ইয়াহুদীদের নিকট একটি প্রতিনিধি দল প্রেরণ করেছিল। উদ্দেশ্য এই যে, ইয়াহুদীগণ তাদেরকে কতক প্রশ্ন শিখিয়ে দিবে। কুরাইশগণ সেগুলো রসূলুল্লাহ (সা) কে জিজ্ঞেস করবে এবং এরদ্বারা তারা তাকে পরীক্ষা করবে৷ ইয়াহুদীগণ বলেছিল যে, তোমরা তাকে এমন এক সম্প্রদায় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে, যারা অতীতেই বিলীন হয়ে গিয়েছে। যার ফলে ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে জানা যায় না। আর প্রশ্ন করবে পৃথিবী প্রদক্ষিণকারী একজন লোক সম্পর্কে এবং জিজ্ঞেস করবে রূহ সম্পর্কে।


আর এরই প্রেক্ষিতে কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা'আলা নাযীল করেন -

তুমি কি মনে কর যে, গুহা ও রাকীমের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলীর মধ্যে বিস্ময়কর ছিল? যখন যুবকরা পাহাড়ের গুহায় আশ্রয়গ্রহণ করল তখন তারা বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে নিজের কাছ থেকে রহমত দান করুন এবং আমাদের জন্যে আমাদের কাজ সঠিকভাবে পূর্ণ করুন। অতঃপর আমি তাদেরকে গুহায় ঘুমন্ত অবস্থায় কয়েক বছর রেখে দিলাম। অতঃপর আমি তাদেরকে জাগ্রত করি, একথা জানার জন্যে যে, দুই দলের মধ্যে কোন দল তাদের অবস্থানকাল সম্পর্কে অধিক নির্ণয় করতে পারে। তোমার কাছে তাদের ইতিবৃত্তান্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। তারা ছিল কয়েকজন যুবক। তারা তাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল এবং আমি তাদের সৎপথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।

আমি তাদের মন দৃঢ় করেছিলাম, যখন তারা উঠে দাঁড়িয়েছিল। অতঃপর তারা বলল, আমাদের পালনকর্তা তো তিনিই যিনি আসমান ও যমীনের পালনকর্তা। আমরা কখনো তার পরিবর্তে অন্য কোন উপাস্যকে আহবান করব না। যদি করি, তবে তা অত্যন্ত গর্হিত কাজ হবে। এরা আমাদেরই স্ব-জাতি, এরা তাঁর পরিবর্তে অনেক উপাস্য গ্রহণ করেছে। তারা এদের সম্পর্কে প্রকাশ্য প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? তার চেয়ে বড় জালিম আর কে হতে পারে যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে?

তোমরা যখন তাদের থেকে পৃথক হলে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত করে তাদের থেকেও, তখন তোমরা গুহায় আশ্রয়গ্রহণ কর। তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্যে দয়া বিস্তার করবেন এবং তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজ কর্মকে ফলপ্রসু করার ব্যবস্থা করবেন।

তুমি সূর্যকে দেখতে পেতে, যখন উদিত হত, তাদের গুহা থেকে পাশ কেটে ডান দিকে চলে যেত এবং যখন অস্তমিত হত, তাদের থেকে পাশ কেটে বামদিকে নেমে যেত, অথচ তারা ছিল গুহার প্রশস্ত চত্বরে অবস্থিত। এটা আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্যতম। আল্লাহ যাকে সৎপথে চালান, সেই সৎপথপ্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনও তার জন্যে পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবে না। তুমি মনে করবে তারা জাগ্রত, অথচ তারা নিদ্রিত। আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাই ডান দিকে ও বাম দিকে। তাদের কুকুরটি ছিল সামনের পা দুটি গুহাদ্বারে প্রসারিত করে। যদি তুমি উঁকি দিয়ে তাদেরকে দেখতে, তবে পেছন ফিরে পলায়ন করতে এবং তাদের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়তে। আমি এই অবস্থায় তাদেরকে জাগ্রত করলাম, যাতে তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের একজন বলল, তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ? তাদের কেউ বলল, একদিন অথবা একদিনের কিছু অংশ অবস্থান করছি। (শেষে) তারা (সবাই) বলল, তোমাদের পালনকর্তাই ভাল জানেন তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ।

এখন তোমাদের একজনকে তোমাদের এই মুদ্রাসহ শহরে প্রেরণ কর; সে যেন দেখে কোন খাদ্য পবিত্র। অতঃপর তা থেকে যেন কিছু খাদ্য নিয়ে আসে তোমাদের জন্য; সে যেন বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজ করে, আর কিছুতেই যেন তোমাদের খবর কাউকে না জানায়। তারা যদি তোমাদের খবর জানতে পারে, তবে পাথর মেরে তোমাদেরকে হত্যা করবে, অথবা তোমাদেরকে তাদের ধর্মে ফিরিয়ে নেবে। তাহলে তোমরা কখনই সাফল্য লাভ করবে না।

এমনিভাবে আমি তাদের খবর প্রকাশ করে দিলাম, যাতে তারা জ্ঞাত হয় যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং কিয়ামতের দিন সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই।

যখন তারা নিজেদের কর্তব্য বিষয়ে পরস্পর বিতর্ক করছিল, তখন তারা বলল, তাদের উপর সৌধ নির্মাণ কর। তাদের পালনকর্তা তাদের বিষয়ে ভাল জানেন। তাদের কর্তব্য বিষয়ে যাদের মত প্রবল হল, তারা বলল, আমরা অবশ্যই তাদের স্থানে মসজিদ নির্মান করব। অজ্ঞাত বিষয়ে অনুমানের উপর ভিত্তি করে এখন তারা বলবে, তারা ছিল তিন জন; তাদের চতুর্থটি তাদের কুকুর। একথাও বলবে; তারা পাঁচ জন, তাদের ষষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর। আবার কতক লোক বলবে, তারা ছিল সাত জন, তাদের অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর। বল, আমার পালনকর্তা তাদের সংখ্যা ভাল জানেন। তাদের সম্পর্কে অল্প লোকই জানে। সাধারণ আলোচনা ছাড়া তুমি তাদের সম্পর্কে বিতর্ক করবে না এবং তাদের অবস্থা সম্পর্কে তাদের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদও করবে না। তুমি কোন কাজের বিষয়ে বলবে না যে, সেটি আমি আগামী কাল করব। ‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে’ বলা ব্যতিরেকে। যখন ভুলে যাও, তখন তোমার পালনকর্তাকে স্মরণ করু এবং বল, আশা করি আমার পালনকর্তা আমাকে এর চাইতেও নিকটতম সত্যের পথ নির্দেশ করবেন।


আর (কারো মতে) তারা তাদের গুহায় ছিলো তিনশ বছর, আর কিছু লোক আরও নয় বছর বাড়িয়ে নিয়েছে। বল, তারা কতকাল অবস্থান করেছে, তা আল্লাহই ভাল জানেন। নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই কাছে রয়েছে। তিনি কত চমৎকার দেখেন ও শোনেন। তিনি ব্যতীত তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। তিনি কাউকে নিজ কর্তৃত্বে শরীক করেন না। [সূরা কাহাফ, আয়াত: ৯-২৬]


আয়াতের বাচনভঙ্গি ও বহু তাফসিরকারকের মতে তাদের সম্প্রদায়ের লোকজন ছিল মুশরিক। তারা মূর্তিপূজা করত। বহু তাফসিরকার ও ইতিহাসবিদ অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, তারা (যুবকেরা) দাকরানূমের সময় অভিজাত বংশীয় লোক ছিলেন। কারো কারো অভিমত যে, তারা রাজপুত্র ছিলেন।


তথ্যসূত্র: আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া



প্রাসঙ্গিক বিষয়

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ