Ticker

5/recent/ticker-posts

মূসা (আ:) এর সাথে খিজির (আ:) এর সাক্ষাতের ঘটনা

আল্লাহ্ তা'আলা বলেন-

যখন মূসা তাঁর সঙ্গীকে কে বলছিলেন, দুই সমুদ্রের মিলনস্থলে না পৌঁছা পর্যন্ত আমি সফর শেষ করব না, অন্যথায় আমি যুগ যুগ ধরে চলতে থাকব। অতঃপর যখন তাঁরা দুই সুমুদ্রের মিলনস্থলে পৌছালেন, তখন তাঁরা নিজেদের মাছের কথা ভুলে গেলেন। অতঃপর মাছটি সমুদ্রে সুড়ঙ্গ পথ সৃষ্টি করে নেমে গেল। যখন তাঁরা সে স্থানটি অতিক্রম করে গেলেন, মূসা সঙ্গী কে বললেন, আমাদের নাশতা আন। আমরা এই সফরে পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছি। সে বলল, আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমরা যখন প্রস্তর খন্ডে আশ্রয় নিয়েছিলাম, তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। আমি (আপনাকে) একথা বলতে শয়তানই আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। মাছটি আশ্চর্য জনক ভাবে সমুদ্রে নিজের পথ করে নিয়েছে। মূসা বললেন, আমরা তো এ স্থানটিই খুঁজছিলাম। অতঃপর তাঁরা নিজেদের পায়ের চিহ্ন ধরে ফিরে চললেন। (১৮: ৬০-৬৪)


অতঃপর তাঁরা আমার বান্দাদের মধ্যে এমন একজনের সাক্ষাত পেলেন, যাকে আমি আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ করেছিলাম, আর আমার পক্ষ থেকে দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান। মূসা তাঁকে বললেন, আমি কি এ শর্তে আপনার অনুসরণ করতে পারি যে, যে বিশেষ জ্ঞান আপনাকে শেখানো হয়েছে, তা থেকে আমাকে কিছু শিক্ষা দেবেন? তিনি বললেন, আপনি আমার সাথে কিছুতেই ধৈর্য্যধারণ করে থাকতে পারবেন না। যে বিষয়ে আপনি কিছুই জানেন না সে ব্যাপারে আপনি সবর করবেনই বা কেমন করে? মূসা বললেন, আল্লাহ চাহেন তো আপনি আমাকে ধৈর্য্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার কোন আদেশ অমান্য করব না। তিনি বললেন, যদি আপনি আমার অনুসরণ করেনই তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেন না, যে পর্যন্ত না আমি নিজেই সে সম্পর্কে আপনাকে কিছু বলি। (১৮: ৬৫-৭০)


অতঃপর তারা চলতে লাগল, অবশেষে যখন তারা নৌকায় আরোহণ করল, তখন তিনি তাতে ছিদ্র করে দিলেন। মূসা বললেন, আপনি কি এর আরোহীদেরকে ডুবিয়ে দেয়ার জন্যে এতে ছিদ্র করে দিলেন? নিশ্চয়ই আপনি একটি বড়ই মারাত্মক কাজ করলেন। তিনি বললেন, 'আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সাথে কিছুতেই ধৈর্য্য ধরতে পারবেন না?'মূসা বললেন, আমাকে আমার ভুলের জন্যে অপরাধী করবেন না এবং আমার কাজে আমার উপর কঠোরতা আরোপ করবেন না। (১৮: ৭১-৭৩)

অতঃপর তারা চলতে লাগল। চলতে চলতে যখন একটি বালকের সাক্ষাত পেলেন, তখন তিনি তাকে হত্যা করলেন। মূসা বললেন, আপনি কি একটি নিস্পাপ জীবন শেষ করে দিলেন কোন প্রকর হত্যার অপরাধ ছাড়াই? নিশ্চয়ই আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন। তিনি বললেন, আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সাথে ধৈর্য্য ধরে থাকতে পারবেন না। মূসা বললেন, এরপর যদি আমি আপনাকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করি, তবে আপনি আমাকে আর সাথে রাখবেন না। আপনি আমার পক্ষ থেকে অভিযোগ মুক্ত হয়ে গেছেন। (১৮: ৭৪-৭৬)

অতঃপর তারা চলতে লাগল, চলতে চলতে যখন একটি জনপদের অধিবাসীদের কাছে পৌঁছে তাদের কাছে খাবার চাইল, তখন তারা তাদের অতিথেয়তা করতে অস্বীকার করল। অতঃপর সেখানে তারা একটি দেয়াল দেখলো, সেটি পড়ে যাবার উপক্রম হয়েছিল। সেটি তিনি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে দিলেন। মূসা বললেন, আপনি ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকে এর পারিশ্রমিক নিতে পারতেন। তিনি বললেন, এখানেই আমার ও আপনার মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হল। এখন যে বিষয়ে আপনি ধৈর্য্য ধরতে পারেননি, আমি তার তাৎপর্য বলে দিচ্ছি। (১৮: ৭৭-৭৮)

নৌকাটির ব্যাপারে-সেটি ছিল কয়েকজন দরিদ্র ব্যক্তির। তারা সমুদ্রে জীবিকা অন্বেষন করত। আমি ইচ্ছা করলাম যে, সেটিকে ক্রটিযুক্ত করে দেই। তাদের অপরদিকে ছিল এক বাদশাহ। সে বলপ্রয়োগে প্রত্যেকটি নৌকা ছিনিয়ে নিত। বালকটির ব্যাপার হলো- তার পিতা-মাতা ছিল ঈমানদার। আমাদের আশঙ্কা হলো, এ বালক তার বিদ্রোহাত্মক আচরণ ও কুফরীর মাধ্যমে তাদেরকে কষ্ট দেবে। তাই আমরা চাইলাম তাদের রব তার বদলে তাদেরকে যেন এমন একটি সন্তান দেন যে চরিত্রের দিক দিয়েও তার চেয়ে ভাল হবে এবং যার কাছ থেকে সদয় আচরণও বেশী আশা করা যাবে। প্রাচীরের ব্যাপারটি হল-সেটি ছিল ঐ শহরের দুজন পিতৃহীন বালকের। এর নীচে ছিল তাদের গুপ্তধন এবং তাদের পিতা ছিল সৎকর্মপরায়ন। তাই আপনার পালনকর্তা ইচ্ছা করলেন যে, তারা যৌবনে পদার্পন করুক এবং নিজেদের গুপ্তধন উদ্ধার করুক। আমি নিজ মতে এটা করিনি। আপনি যে বিষয়ে ধৈর্য্যধারণ করতে অক্ষম হয়েছিলেন, এই হল তার ব্যাখ্যা। (১৮: ৭৯-৮২)


তথ্যসূত্র: সূরা আল কাহফ



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ