Ticker

5/recent/ticker-posts

তারা রাত্রিকালে খুব কমই শয়ন করতো



মহান আল্লাহ বলেন,

كَانُواْ قَلِيلٗا مِّنَ ٱلَّيۡلِ مَا يَهۡجَعُونَ

وَبِالأَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُونَ 

“তারা রাত্রিকালে খুব কমই শয়ন করতো। আর তারা রাত্রির শেষ প্রহরে ক্ষমা প্রার্থনা করতো।” সুরা আয-যারিয়াতঃ ১৭-১৮। 

ইমাম ইবনে কাসীর রহি'মাহুল্লাহ এই আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন,

আল্লাহ তাআ’লা আল্লাহভীরু লোকদের পার্থিব দুনিয়াতে আন্তরিকতাপূর্ণ কাজের বিস্তারিত বিবরণ দিচ্ছেন যে, “তারা রাত্রির সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত করত।” 

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়ল্লাহু আ’নহুমাসহ প্রমুখ গুরুজনের উক্তি এই আয়াতের অর্থ হচ্ছে, “তাদের উপর এমন কোন রাত্রি অতিবাহিত হতো না, যার কিছু অংশ তারা আল্লাহর যিকিরে না কাটাতেন। হয় রাত্রির প্রথমাংশে কিছু নফল পড়তেন, না হয় রাত্রির মধ্যভাগে পড়তেন। অর্থাৎ প্রত্যেক রাত্রের কোন না কোন সময় কিছু না কিছু নামায অবশ্যই পড়তেন। সারা রাত তারা বিছানায় শয়ন করে কাটিয়ে দিতেন না।”

হযরত আবুল আলিয়া রহি’মাহুল্লাহসহ প্রমুখ মনীষী বলেন যে, “এমন লোকেরা মাগরিব ও ইশার নামাযের মাঝে কিছু নফল নামায পড়তেন।” 

হযরত ইমাম আবু জাফর বাকির রহি’মাহুল্লাহ বলেন যে, “এই আয়াতের অর্থ হচ্ছেঃ তারা ইশার নামাযের পূর্বে ঘুমাতেন না।”

কোন কোন তাফসীরকার বলেন যে, “রাত্রে তাদের ঘুম খুব কম হতো। কিছু সময় ঘুমাতেন এবং কিছু সময় জেগে থাকতেন। আর যখন ইবাদতে মনোযোগ দিতেন তখন সকাল হয়ে যেতো।”

এরপর মহান আল্লাহ বলেন, “আসহার অর্থাৎ রাত্রির শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতো।”

হযরত আহনাফ ইবনে কায়েস রহি’মাহুল্লাহ এই আয়াতের এই ভাবার্থ বর্ণনা করার পর বলতেন, “বড়ই দুঃখজনক ব্যাপার যে, আমার মধ্যে এটা নেই।” 

তাঁর সুযোগ্য ছাত্র তাবেয়ী বিদ্বান হাসান আল-বসরী রহি’মাহুল্লাহর উক্তি রয়েছে যে, তিনি প্রায়ই বলতেন, “আমি যখন আমার আমল জান্নাতীদের আমলের সামনে রাখি, তখন আমার আমলকে তাদের আমলের তুলনায় অতি নগণ্য দেখি। পক্ষান্তরে, যখন আমি আমার আমল জাহান্নামীদের আমলের সামনে রাখি তখন দেখি যে, তারা তো কল্যাণ হতে সম্পূর্ণরূপে দূরে ছিল। তারা ছিল আল্লাহর কিতাবকে অস্বীকারকারী এবং মৃত্যুর পর পুনর্জীবনকে অবিশ্বাসকারী। সুতরাং আমার অবস্থা ঐ লোকেদের মত যাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেন, “তারা ভাল ও মন্দ আমল মিশ্রিত করে ফেলেছে।” সুরা তোওবাঃ ১০২।

বনু তামীম গোত্রের একটি লোক হযরত যায়েদ ইবনে আসলাম রহি’মাহুল্লাহকে বললো, “হে আবু সালমা রহি’মাহুল্লাহ! এই গুণ তো আমাদের মধ্যে নেই যে, আমরা রাত্রে খুব কম ঘুমাই? আমরা তো খুব কম সময় আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়ে থাকি।” তখন তিনি বললেন, “ঐ ব্যক্তিও বড় ভাগ্যবান; যে ঘুম আসলে শুয়ে পড়ে এবং যখন জেগে ওঠে তখন আল্লাহকে ভয় করতে থাকে।”

হযরত যুহরী রহি’মাহুল্লাহ এবং হাসান রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “এই আয়াতের ভাবার্থ এই যে, তারা রাত্রির অধিকাংশ তাহাজ্জুদ নামাযে কাটিয়ে দেয়।” 

হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়ল্লাহু আ’নহুমা এবং হযরত ইবরাহীম নাখঈ রহি’মাহুল্লাহ বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে, “তারা রাত্রির সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত করে।” 

আল্লাহ তাআ'লা আমাদেরকে এমন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করুন।


উৎস: তাফসীর ইবনে কাসীর। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ