ইহুদী এবং খ্রীস্টানদের আয়-উন্নতি ও দুনিয়াবী চাক-চিক্য দেখে দুর্বল ঈমানের অনেক মুসলিমরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট থাকে, তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়। অনেক নামধারী মুসলিম ইসলামের কথা ভুলে তাদের অনুসৃত ভ্রান্ত জীবন ব্যবস্থা অনুকরণ করে গর্ব বোধ করে। ইহুদী এবং খ্রীস্টানদের সম্পর্কে মুসলিমদের দৃষ্টিভংগি কেমন হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে ক্বুরআনুল কারীমের কিছু আয়াতের প্রতি আলোকপাত করা হলো।
______________________________________
ইহুদী খ্রীস্টানরা কি "আব্রাহামিক ফেইথ" বা ইব্রাহীম আ'লাইহিস সালামের দ্বীনের অনুসরণ করে?
উত্তরঃ ইহুদী, খ্রীস্টান এবং একশ্রেণীর মুনাফেক মার্কা কথিত মডারেট মুসলিমরা মনে করে, ইহুদী খ্রীস্টানরা "আব্রাহামিক ফেইথ" বা ইব্রাহীম আ'লাইহিস সালামের দ্বীনের অনুসরণ করে।
মূলত এটা তাদের মুখের দাবী এবং অলীক কল্পনা মাত্র। ইহুদী খ্রীস্টানরা ইব্রাহীম আ'লাইহিস সালামের দ্বীনের অনুসরণ করে না, বরং তারা তার সাথে কুফুরী করেছে।
(১) ইব্রাহীম আ'লাইহিস সালামের দ্বীন হচ্ছে, শিরক এবং কুফর থেকে মুক্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা, তার আদেশ ও নিষেধ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা।
মহান আল্লাহ ইব্রাহীম আ'লাইহিস সালামের প্রশংসা করে বলেন,
اِنَّ اِبۡرٰہِیۡمَ کَانَ اُمَّۃً قَانِتًا لِّلّٰہِ حَنِیۡفًا ؕ وَ لَمۡ یَکُ مِنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ
নিশ্চয় ইবরাহীম ছিলেন এক উম্মত, আল্লাহর একান্ত অনুগত, একনিষ্ঠ এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। সুরা আন-নাহলঃ ১২০।
______________________________________
(২) পক্ষান্তরে, প্রাচীনকালের এবং বর্তমান যুগের ইহুদী এবং খ্রীস্টানরা বিভিন্ন ধরণের শিরক ও কুফুরীতে লিপ্ত হয়ে এবং প্রবৃত্তির খেয়াল খুশি মতো চলে আল্লাহর দ্বীনকে অস্বীকার করে বিভিন্ন দল ও মতে ভাগ হয়ে গেছে। একারণে ইহুদী এবং খ্রীস্টানদের মনগড়া ধর্মমত থেকে ইবরাহীম আ'লাইহিস সালামকে মুক্ত ঘোষণা করে মহান আল্লাহ বলেন,
مَا کَانَ اِبۡرٰہِیۡمُ یَہُوۡدِیًّا وَّ لَا نَصۡرَانِیًّا وَّ لٰکِنۡ کَانَ حَنِیۡفًا مُّسۡلِمًا ؕ وَ مَا کَانَ مِنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ
ইবরাহীম ইয়াহূদীও ছিলেন না, নাসারাও ছিলেন না; বরং তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। সুরা আলে ইমরানঃ ৬৭।
______________________________________
(৩) আল্লাহ তাআ'লা আরও বলেন,
اَمۡ تَقُوۡلُوۡنَ اِنَّ اِبۡرٰہٖمَ وَ اِسۡمٰعِیۡلَ وَ اِسۡحٰقَ وَ یَعۡقُوۡبَ وَ الۡاَسۡبَاطَ کَانُوۡا ہُوۡدًا اَوۡ نَصٰرٰی ؕ قُلۡ ءَاَنۡتُمۡ اَعۡلَمُ اَمِ اللّٰہُ ؕ وَ مَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنۡ کَتَمَ شَہَادَۃً عِنۡدَہٗ مِنَ اللّٰہِ ؕ وَ مَا اللّٰہُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعۡمَلُوۡنَ
তোমরা কি বলছ, ইবরাহীম ও ইসমাঈল এবং ইসহাক ও ইয়াকূব এবং তার বংশধর সকলেই ইয়াহূদী কিংবা নাসারা ছিল’? বল,‘ তোমরাই বেশী জান নাকি আল্লাহ’? ঐ ব্যক্তি হতে বড় যালিম আর কে হবে, যে আল্লাহর পক্ষ হতে আগত সাক্ষ্যকে গোপন করে? তোমরা যা কিছু করছ, আল্লাহ সে বিষয়ে গাফিল নন। সুরা আল-বাক্বারাহঃ ১৪০।
______________________________________
(৪) ইবরাহীম আ'লাইহিস সালাম ও ইয়াকুব আ'লাইহিস সালাম তাদের পরবর্তী বংশধরদের যে ওসীয়ত করে গেছেন তা কোন ইয়াহূদী ধর্ম নয়, কোন নাসরানী ধর্মও নয়। তা হচ্ছে একমাত্র ইসলাম। এ ব্যাপারে ক্বুরআনে অনেক আয়াত বিদ্যমান। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(اِنَّ الدِّیْنَ عِنْدَ اللہِ الْاِسْلَامُﺤ وَمَا اخْتَلَفَ الَّذِیْنَ اُوْتُوا الْکِتٰبَ اِلَّا مِنْۭ بَعْدِ مَا جَا۬ءَھُمُ الْعِلْمُ بَغْیًۭا بَیْنَھُمْﺚ وَمَنْ یَّکْفُرْ بِاٰیٰتِ اللہِ فَاِنَّ اللہَ سَرِیْعُ الْحِسَابِ)
“নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে মনোনীত একমাত্র দ্বীন (জীবন বিধান) হচ্ছে ইসলাম। আর আহলে কিতাবরা তাদের কাছে জ্ঞান আসার পর কেবল পরস্পরে বিদ্বেষবশতঃ মতভেদ করেছে। আর যে আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করবে, (তার জেনে রাখা উচিত) আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।” সুরা আলে-ইমরানঃ ১৯।
______________________________________
(৫) অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَمَنْ یَّبْتَغِ غَیْرَ الْاِسْلَامِ دِیْنًا فَلَنْ یُّقْبَلَ مِنْھُﺆ وَھُوَ فِی الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ)
“আর যে ব্যক্তি ইসলাম বাদ দিয়ে অন্য কোন দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা) তালাশ করবে তার কাছ থেকে কস্মিনকালেও তা কবূল করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” সুরা আলে ইমরানঃ ৮৫।
______________________________________
(৬) আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহূদীদেরকে তিরস্কার ও ভর্ৎসনা করে বলেন, তোমরা দাবি করো যে, ইবরাহীম ও ইয়াকুব আ'লাইহিস সালাম পরবর্তী বংশধরকে ইয়াহূদী ধর্মে প্রতিষ্ঠিত থাকার অসিয়ত করেছেন। তোমরা কি অসিয়তের সময় উপস্থিত ছিলে? যদি তা না হয় তাহলে তোমাদের দাবী মিথ্যা ও অহেতুক। বরং সকলেই একই দ্বীনের অসিয়ত করেছেন, তা হচ্ছে ইসলাম। যদিও বিধি-বিধানে কিছু পার্থক্য ছিল।
______________________________________
(৭) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
وَالْأَنْبِيَاءُ إِخْوَةٌ لِعَلَّاتٍ أُمَّهَاتُهُمْ شَتَّي وَدِينُهُمْ وَاحِدٌ
নবীরা সকলে বৈমাত্রেয় ভাই, মাতা ভিন্ন কিন্তু তাদের সকলের দ্বীন একটাই। সহীহ বুখারীঃ ৩৪৪৩।
আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহূদীদের লক্ষ করে আরো বলেন, তোমরা যারা বাপ-দাদার দোহাই দিয়ে নিজেদের সঠিক ধর্মের অনুসারী দাবি করছো, তোমাদের ঐ দোহাই দিয়ে লাভ নেই। তারা যা কিছু করেছে তা নিয়ে চলে গেছে। সুতরাং তাদের দোহাই দিয়ে কোন লাভ নেই, প্রকৃত জামিন হচ্ছে সঠিক ঈমান ও সৎ আমল। যারা এ দুইটি নিয়ে আসবে তারাই সফলকাম হবে।
1 মন্তব্যসমূহ
জাযাকাল্লাহ খাইরান
উত্তরমুছুন