الرَّحْمـنِ الرَّحِيمِ
'যিনি পরম দয়ালু ও অতিশয় করুণাময়।' -(সূরা ফাতিহা, আয়াত -৩)
ইমাম কুরতবী (রহ.) বলেন যে, মহান আল্লাহ 'রব্বিল আলআমিন' এর বিশেষণের পর 'আর-রহমানির রহিম' বিশেষণটি ভয় প্রদর্শনের পর আশা ভরসার উদ্রেক কল্পে আনয়ন করেছেন। যেমন তিনি অন্যত্র বলেছেন, 'আমার বান্দাদের সুসংবাদ দাও যে, আমি বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।' -(১৫: ৪৯)
'রব' শব্দটির মধ্যে ভয় প্রদর্শন রয়েছে এবং 'রহমান' ও 'রহীম' শব্দ দুইটির মধ্যে আশা ভরসা রয়েছে। সহীহ মুসলিমের মধ্যে হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'যদি ঈমানদারগণ আল্লাহর ক্রোধ এবং তার ভীষন শাস্তি সম্পর্কে পূর্ণভাবে অবহিত হতো, তবে তাদের অন্তর হতে বেহেশতের আশা সরে যেতো এবং কাফিররা যদি আল্লাহ তা'আলার দান ও দয়া সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখতো তবে তারা কখনো নিরাশ হতো না।'
কোন কোন আলিমগণ বলেছেন, 'রহিম' এর তুলনায় 'রহমান' এর মধ্যে মুবালাগা (রহমত ও দয়ার ভাগ) বেশি। দুনিয়াতে তাঁর রহমত ব্যাপক; বিনা পার্থক্যে কাফির ও মু'মিন সকলেই তা দ্বারা উপকৃত হচ্ছে। তবে আখিরাতে তিনি কেবল 'রহীম' হবেন। অর্থাৎ তাঁর রহমত কেবল ম'মুনদের জন্যই নির্দিষ্ট হবে। [তাফসীর আহসানুল বায়ান]
মানুষের দৃষ্টিতে কোন জিনিস খুব বেশী বলে প্রতীয়মান হলে সেজন্য সে এমন শব্দ ব্যবহার করে যার মাধ্যমে আধিক্যের প্রকাশ ঘটে। আর একটি আধিক্যবোধক শব্দ বলার পর যখন সে অনুভব করে যে ঐ শব্দটির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জিনিসটির আধিক্যের প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি তখন সে সেই একই অর্থে আর একটি শব্দ ব্যবহার করে। এভাবে শব্দটির অন্তর্নিহিত গুণের আধিক্য প্রকাশের ব্যাপারে যে কমতি রয়েছে বলে সে মনে করছে তা পূরণ করে। আল্লাহর প্রশংসায় ‘রহমান’ শব্দের পরে আবার ‘রহীম’ বলার মধ্যেও এই একই নিগূঢ় তত্ত্ব নিহিত রয়েছে। আরবী ভাষায় ‘রহমান’ একটি বিপুল আধিক্যবোধক শব্দ। কিন্তু সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর রহমত ও মেহেরবানী এত বেশী ও ব্যাপক এবং এত সীমাসংখ্যাহীন যে, তা বয়ান করার জন্য সবচেয়ে বেশী ও বড় আধিক্যবোধক শব্দ ব্যবহার করার পরও আবার ‘রহীম’ শব্দটিও বলা হয়েছে। [তাফহীমুল কুরআন]
তথ্যসূত্র:
- তাফসীর ইবনে কাছীর
- তাফসীর আহসানুল বায়ান
- তাফহীমুল কুরআন
1 মন্তব্যসমূহ
জাযাকাল্লাহ খাইরান
উত্তরমুছুন