Ticker

5/recent/ticker-posts

নবী ইবরাহীম (আ) এর সাহসিকতা

নবী ইবরাহীম (আ) কে আল্লাহ্ সুবাহানহুয়া তা'আলা এমন জ্ঞান দিয়েছিলেন যে, তিনি ছোটবেলা থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন যে তার সম্প্রদায় যে মিথ্যা উপাস্যদের ইবাদাত করে তারা কোন কিছু করার ক্ষমতাই রাখেনা। তার এই তাওহীদ শিক্ষা মানুষের কাছে প্রচার করতে গিয়ে তার সাহস ফুটে উঠে। আর এই সাহসিকতা এতই বেশি ছিল যে, তিনি অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ হওয়ার পরও আল্লাহর এককত্বের সাক্ষ্য দিয়েছেন।

স্মরণ কর ইব্রাহীমকে। যখন তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিল; তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁকে ভয় কর। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বোঝ। তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে কেবল প্রতিমারই পূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত করছ, তারা তোমাদের রিযিকের মালিক নয়। কাজেই আল্লাহর কাছে রিযিক তালাশ কর, তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। -[ক্বুরআন ২৯ : ১৬-১৯]

এ কিতাবে উল্লেখিত ইব্রাহীমের কথা স্মরণ কর। নিশ্চয়ই সে ছিল একজন সত্যবাদী, একজন নবী। যখন সে তার পিতাকে বলল, হে আমার পিতা! আপনি কেন এমন জিনিসের ইবাদাত করেন যে শুনে না, দেখে না এবং আপনার কোন উপকারে আসে না? হে আমার পিতা! আমার কাছে এমন জ্ঞান এসেছে; যা আপনার কাছে আসেনি, সুতরাং আমার অনুসরণ করুন, আমি আপনাকে সরল সঠিক পথ দেখাব। হে আমার পিতা! আপনি শয়তানের ইবাদত করবেন না, শয়তান হচ্ছে দয়াময়ের অবাধ্য। হে আমার পিতা! আমি আশঙ্কা করি, দয়াময়ের একটি আযাব আপনাকে স্পর্শ করবে, অতঃপর আপনি শয়তানের সঙ্গী হয়ে যাবেন। পিতা বলল, হে ইব্রাহীম! তুমি কি আমার উপাস্যদের (দেবদেবীগুলো) থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ? যদি তুমি বিরত না হও, তবে আমি অবশ্যই প্রস্তরাঘাতে তোমার প্রাণনাশ করব। তুমি চিরতরে আমার কাছ থেকে দূর হয়ে যাও। ইব্রাহীম বলল, আপনার প্রতি সালাম, আমি আমার পালনকর্তার কাছে আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব। তিনি আমার প্রতি বড়ই মেহেরবান। আমি পরিত্যাগ করছি আপনাদেরকে এবং আপনারা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদত কর তাদেরকে; আমি আমার পালনকর্তাকে ডাকি। আশা করি, আমার পালনকর্তাকে ডেকে আমি বঞ্চিত হব না। -[ক্বুরআন ১৯ : ৪১-৪৮]

এখানে আল্লাহ্ ইবরাহীম (আ) ও তাঁর পিতার মধ্যে যে কথোপকথন ও বিতর্ক হয়েছিল তা উল্লেখ করেছেন। সত্যের দিকে পিতাকে যে কোমল ভাষায় ও উত্তম ভংগিতে আহ্বান করেছেন তা এখানে সুন্দরভাবে ব্যক্ত হয়েছে। তিনি সৎসাহসের সাথে পিতার মূর্তি পূজার অসারতা তুলে ধরেছেন এভাবে যে, এগুলো তাদের উপাসনাকারীদের ডাক শুনতে পায় না, তাদের অবস্থানও দেখতে পায় না, তাহলে কিভাবে এরা উপাসকদের উপকার করবে?

যখন তিনি তাঁর পিতা ও তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিল, এই মূর্তিগুলো কী, যাদের তোমরা পূজারী হয়ে বসে আছ? তারা বলল, আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে এদের পুজা করতে দেখেছি। সে বলল, তোমরা প্রকাশ্য গোমরাহীতে আছ এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও। তারা বলল, তুমি কি আমাদের কাছে সত্যসহ আগমন করেছ, না তুমি কৌতুক করছ? সে বলল, না, তিনিই তোমাদের পালনকর্তা যিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের পালনকর্তা, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন; আর আমি এই বিষয়েরই সাক্ষ্যদাতা। (ইবরাহীম বলল) আল্লাহর কসম, যখন তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে চলে যাবে, তখন আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর ব্যাপারে একটা ব্যবস্থা অবলম্বন করব। অতঃপর সে সেগুলোকে চূর্ণ-বিচুর্ণ করে দিলেন ওদের প্রধানটি ব্যতীত, যাতে তারা তাঁর কাছে প্রত্যাবর্তন করে। তারা বলল, আমাদের উপাস্যদের সাথে এরূপ ব্যবহার কে করল? সে তো নিশ্চয়ই কোন জালিম। কতক লোকে বলল, আমরা এক যুবককে তাদের সম্পর্কে বিরূপ আলোচনা করতে শুনেছি; তাকে ইব্রাহীম বলা হয়। তারা বলল, তাকে জনসমক্ষে উপস্থিত কর, যাতে তারা দেখে। তারা বলল, হে ইব্রাহীম! তুমিই কি আমাদের উপাস্যদের সাথে এরূপ ব্যবহার করেছ? সে বলল, না, এদের এই প্রধানই তো একাজ করেছে। অতএব তাদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তারা কথা বলতে পারে। অতঃপর মনে মনে চিন্তা করল এবং বলল, লোক সকল; তোমরাই বে-ইনসাফ। অতঃপর তারা ঝুঁকে গেল মস্তক নত করে, তুমি তো জান যে, এরা কথা বলে না। সে বলল, তোমরা কি আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদত কর, যা তোমাদের কোন উপকারও করতে পারে না এবং ক্ষতিও করতে পারে না? -[ক্বুরআন ২১ : ৫২-৬৬]

উপরোক্ত আয়াতগুলোতে ইবরাহীম (আ) সাহসিকতা ও দৃঢ়তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিনি তাঁর জাতির মিথ্যা উপাস্যদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট যুক্তি উপস্থাপন করেছেন, যা তাদেরকে মাথা অবনত করতে বাধ্য করে। কিন্তু তাদের দাম্ভিকতা তাঁর বিরুদ্ধেই উদ্ধত করলো।


তথ্যসূত্র: আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১ম খণ্ড


প্রাসঙ্গিক বিষয়

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ